বিশ্বের ১১৯তম দেশ হিসেবে ই-পাসপোর্ট যুগে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ, যা দক্ষিন এশিয়ার মধ্যে প্রথম। প্রথম পর্যায়ে প্রতিদিন ২৫ হাজার ই-পাসপোর্ট ইস্যু করা হবে।
ই-পাসপোর্টের আবেদনঃ
অনলাইনে আবেদন ফরম পূরণের পূর্বে ব্যাংকের অনলাইন মাধ্যমে টাকা জমা দিতে হবে। ব্যাংক থেকে সরবরাহ করা রেফারেল নম্বর কোডটি ব্যবহার করতে হবে অনলাইন আবেদন করার সময়।
আবার কেউ চাইলে ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড দিয়েও পাসপোর্ট ফি জমা দেয়া যাবে। প্রয়োজনীয় তথ্য পূরণ করে সাবমিট করার পর প্রিন্ট কপি নিতে হবে। সেই কপি নিজে গিয়ে পাসপোর্ট অফিসে জমা দিতে হবে। আবেদন ফরমে ছবি সত্যায়ন দরকার না হলেও পুলিশ ভেরিফিকেশন লাগবে।
অনলাইনে পূরণ না করে পিডিএফ ফরম ডাউনলোড করে হাতেও পূরণ করা যাবে। বয়স্কদের ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র ও অপ্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে জন্মনিবন্ধন সনদ দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
আবেদনপত্র জমা দেওয়ার সময় ই-পাসপোর্টের জন্য ডেমোগ্রাফিক তথ্য, ১০ আঙুলের ছাপ, চোখের কর্নিয়ার ছবি ও ডিজিটাল সই সংগ্রহ করবে পাসপোর্ট অফিস। এসব তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ডাটা সেন্টার ও ডিজ্যাস্টার রিকভারি সেন্টারের সার্ভারে সংরক্ষণ করা হবে। পাশাপাশি পাসপোর্টের আবেদনকারীদের পাসপোর্ট দেওয়ার জন্য পার্সোনালাইজেশন সেন্টারে পাসপোর্ট প্রিন্টিংয়ের পর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস ও দূতাবাসগুলোয় পাসপোর্ট বিতরণ করা হবে। সব তথ্য চিপে যুক্ত থাকবে। ইমিগ্রেশন পুলিশ বিশেষ যন্ত্রের সামনে পাসপোর্টের পাতাটি ধরতেই সব তথ্য বেরিয়ে আসবে।
মেয়াদ অনুযায়ী ই-পাসপোর্ট ফিঃ
নতুন পাসপোর্টের ক্ষেত্রে ৫ বছর মেয়াদের ৪৮ পাতার ই-পাসপোর্টে ১৫% ভ্যাটসহ মেয়াদ অনুসারে ফি নির্ধারন করা হয়েছে। ১৫ দিনের সাধারণ পাসপোর্ট আবেদনের ক্ষেত্রে ৩৫০০/- (সাড়ে তিন হাজার), ৭ দিনে জরুরি পাসপোর্ট আবেদনের ক্ষেত্রে ৫৫০০/- (সাড়ে পাঁচ হাজার) এবং ৩ দিনে অতি জরুরি পাসপোর্ট আবেদনের ক্ষেত্রে ৭৫০০/- (সাড়ে সাত হাজার) টাকা। তবে পুরনো অথবা মেয়াদোত্তীর্ণ পাসপোর্ট রি-ইস্যু করার ক্ষেত্রে অতি জরুরি পাসপোর্ট দু’দিনে, জরুরি পাসপোর্ট তিন দিনে ও সাধারণ পাসপোর্ট সাত দিনের মধ্যে পাওয়া যাবে।
৫ বছর মেয়াদি ৬৪ পৃষ্ঠার ই-পাসপোর্টের জন্য সাধারণ ফি ৫৫০০/- (সাড়ে পাঁচ হাজার), জরুরি ফি সাড়ে ৭৫০০/- (সাড়ে সাত হাজার) ও অতি জরুরি ফি ১০৫০০ (সাড়ে দশ হাজার) টাকা।
১০ বছর মেয়াদি ৪৮ পৃষ্ঠার পাসপোর্টের জন্য সাধারণ ফি ৫০০০/- (পাঁচ হাজার), জরুরি ফি ৭০০০/- (সাত হাজার) ও অতি জরুরি ফি ৯০০০ (নয় হাজার) টাকা নির্ধারন করা হয়েছে।
১০ বছর মেয়াদি ৬৪ পাতার ই-পাসপোর্ট ১৫% শতাংশ ভ্যাটসহ ১৫ দিনের সাধারণ পাসপোর্ট আবেদনের ক্ষেত্রে ৭০০০/- (সাত হাজার), ৭ দিনে জরুরি পাসপোর্ট আবেদনের ক্ষেত্রে ৯০০০/- (নয় হাজার) এবং ৩ দিনে অতি জরুরি পাসপোর্ট আবেদনের ক্ষেত্রে ১২০০০ (বারো হাজার) টাকা নির্ধারন করা হয়েছে।
ই-পাসপোর্টের সুবিধা
ই-পাসপোর্টে ৩৮ ধরনের নিরাপত্তা ফিচার থাকবে। বর্তমানে এমআরপি ডেটাবেজে যেসব তথ্য আছে, তা ই-পাসপোর্টে স্থানান্তর করা হবে। পাসপোর্টের মেয়াদ হবে পাঁচ ও ১০ বছর। ই-পাসপোর্ট চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এমআরপি পাসপোর্ট বাতিল হয়ে যাবে না। তবে কারও পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে তাকে এমআরপির বদলে ই-পাসপোর্ট নিতে হবে।
বর্তমানে বই আকারে যে পাসপোর্ট আছে, ই-পাসপোর্টেও একই ধরনের বই থাকবে। তবে বর্তমানে পাসপোর্টের বইয়ের শুরুতে ব্যক্তির তথ্যসংবলিত যে দু’টি পাতা আছে, ই-পাসপোর্টে তা থাকবে না। সেখানে থাকবে পালিমারের তৈরি একটি কার্ড। এই কার্ডের মধ্যে থাকবে একটি চিপ। সেই চিপে পাসপোর্টের বাহকের তথ্য সংরক্ষিত থাকবে।
ই-পাসপোর্টের সব তথ্য কেন্দ্রীয়ভাবে সংরক্ষিত থাকবে ‘পাবলিক কি ডাইরেকটরি’তে (পিকেডি)। আন্তর্জাতিক এই তথ্যভাণ্ডর পরিচালনা করে ইন্টারন্যাশনাল সিভিল অ্যাভিয়েশন অর্গানাইজেশন (আইসিএও)। ইন্টারপোলসহ বিশ্বের সব বিমান ও স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ এই তথ্যভাণ্ডারে ঢুকে তথ্য যাচাই করতে পারে।
ই-পাসপোর্টের বাহক কোনো দেশের দূতাবাসে ভিসার জন্য আবেদন করলে কর্তৃপক্ষ স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে আবেদনকারীর তথ্যের সঙ্গে পিকেডি’তে সংরক্ষিত তথ্য যাচাই করে নেবে এবং আবেদন গ্রহণ করে বইয়ের পাতায় ভিসা স্টিকার কিংবা বাতিল করে সিল দেবে। স্থল ও বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষও একই পদ্ধতিতে পিকেডি’তে ঢুকে ই-পাসপোর্টের তথ্য যাচাই করবে।
ই-পাসপোর্ট চালুর জন্য দেশের প্রতিটি বিমান ও স্থলবন্দরে চাহিদামোতাবেক ই-গেট স্থাপন করে স্বয়ংক্রিয় সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি চালু করা হবে। যাদের হাতে ই-পাসপোর্ট থাকবে, তাদের এই গেট দিয়ে সীমান্ত পার হতে হবে। তবে যাদের হাতে এমআরপি পাসপোর্ট থাকবে, তাদের ইমিগ্রেশনের কাজ বিদ্যমান পদ্ধতিতে চলমান থাকবে।
তথ্য সংগ্রহঃ সারাবাংলা ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর।