ওআরএস অর্থাৎ ওরাল রিহাইড্রেশন সল্ট, আমরা যাকে ওরস্যালাইন বলেই জানি। শরীরের পানিশূন্যতা পূরণ করতে পানির পাশাপাশি দিতে হবে অতিপ্রয়োজনীয় লবণও। কারণ, পানির সঙ্গে সঙ্গে লবণও শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। পানি আর লবণ এই দুইয়ের অভাবেই মারাত্মক জটিলতায় ভুগতে পারে রোগী। তবে এর ব্যবহার বিধি না জানার কারণে মৃত্যুর ঝুকিও থাকে। এ ব্যাপারে চমৎকার পরামর্শ দিয়েছেন ডা. কামরুন নাহার। এই পরামর্শ নেয়া হয়েছে ফেসবুক কমিউনিটি থেকে।
RS ICDDRB এর একটা যুগান্তকারী আবিষ্কার। কিন্তু ব্যবহার বিধি না জানার কারণে এটাই মাঝে মাঝে মৃত্যুর কারণ হয়। অনেকেই স্যালইন গুলাতে জানেন না।
১. ORS গুলোর আগে প্যাকেটের গায়ের লেখা পড়ে নিন । কোনটা ১ লিটার , কোনটা ৫০০ মিলি , কোনটা ২৫০ মিলি তে গুলাতে হয়। একমাত্র প্যাকেটের গায়ে লেখা পডলেই বুঝতে পারবেন কতটুকু পানি লাগবে।যেমন: SMC’র ORS টা ৫০০ মিলি পানিতে গুলাতে হয়, টেষ্টি স্যালাইন ২৫০ পানিতে গুলাতে হয় । তাই গুলানোর আগে অবশ্যই প্যাকেটের গায়ে লেখাটা পড়ে নিন।
২. ৫০০ মিলি পানি মাপতে ৫০০ মিলি মিনারেল ওয়াটারের বোতল ব্যবহার করুন। কোন মগ বা গ্লাস ব্যবহার করবেন না। পানির পরিমাণ কম বেশি হলে মারাত্মক সমস্যা হয়। রোগির লবনাধিক্য বা লবনস্বল্পতা দেখা যায় যার চিকিৎসা খুব কঠিন।
৩. গরম পানিতে স্যালাইন কখনই গুলানো যাবেনা। পানি সিদ্ধ করে ঠান্ডা করে নিন। রোগীকে জানতে হবে স্যালাইন খেলে ঠাণ্ডা লাগেনা। ঠাণ্ডা লগার ভয়ে অনেকে স্যলাইন খাওয়ায় না।
৪. পুরো প্যাকেট একসাথে গুলিয়ে নিতে হবে প্যাকেটের গায়ের লেখার সম পরিমান পানি নিয়ে। অল্প স্যালাইন অল্প পানি এভাবে গুলানো যাবেনা। আধ প্যাকেট স্যলাইন রেখে দিয়ে আধ প্যাকেট গুলানো যাবে না । অনেকে মনে করেন বাচ্চা ছোট এত স্যালাইন খেতে পারবেনা,(হসপিটালের অভিজ্ঞতা) তাই তারা আধ প্যাকেট গুলিয়ে খায়। পুরো প্যাকেট একসাথে গুলান। ১২ ঘন্টা পর যা থাকবে ফেলে দিন । লাগলে আবার নতুন প্যাকেট গুলান। ORS এর দাম ৫ টাকা । বাচ্চার দাম টাকা দিয়ে পরিমাপ করলে হবে কি?
৫. ডাবের পানি দিয়ে স্যালাইন গুলানো যাবেনা। অনেককে তাই করতে দেখেছি। বেশী ডায়রিয়া হলে ২ প্যাকেট দিয়ে ৫০০মিলি পানিতেও গুলাতে দেখেছি । এটা মারাত্মক ক্ষতিকর।
৬. বেশীর ভাগ ডায়রিয়াতে ওষুধ লাগেনা। পানি শুন্যতা পুরনের জন্য ORS দিলেই চলে। কিন্তু ORS এক সাথে বেশিবেশি খাওয়ানো যাবে না। কারণ ডায়রিয়ার সময় অন্ত্রের পানি শোষণ ক্ষমতা কমে যায় । তাই একসাথে বেশী স্যালাইন দিলে তা সাথে সাথে পায়খানার সাথে বেরিয়ে যায়। অতএব অল্প অল্প করে বারবার স্যলাইন খাওয়ান । সবচাইতে ভাল মিনিটে ১ চামচ করে । বমি থাকলে ২ থেকে ৩ মিনিটে ১ চামচ দিবেন।
৭. সবশেষ বলব আমাদের টেলিভিশনে এ বিষয়ক কোন বিজ্ঞাপন প্রচার করা হয় না । নিয়মিত টিভিতে স্যালাইন বানানোর নিয়ম দেখানো উচিত । বিভিন্ন টেলিফোন কোম্পানিগুলো অনেক সুন্দর সুন্দর বিজ্ঞাপন বানায় । জনস্বার্থে এই ধরনের বিজ্ঞাপন কি বানানো যায় না?
–ডাঃ কামরুন নাহার। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ