বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে মহামারি ‘করোনাভাইরাস’ কভিড-১৯। বহু মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে প্রতিদিন। এ ভাইরাসের কার্যকর কোন প্রতিষেধক এখনো পর্যন্ত উদভাবন হয়নি। তবে বিজ্ঞানীরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন দিনরাত। যদিও এ ভাইরাস থেকে বাঁচতে সবচেয়ে কার্যকর ব্যবস্থা বলা হচ্ছে- কোয়ারেন্টিন, আইসোলেশন, সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং, লকডাউন ইত্যাদি শব্দ। চলুন জেনে নেই কোন শব্দতে কী বুঝায়ঃ
কোয়ারেন্টিন
এর বাংলা অর্থ- সংগনিরোধ। যাঁরা করোনাভাইরাস টেস্টে পজিটিভ বলে পরীক্ষিত হয়েছেন বা টেস্ট করতে দিয়ে রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছেন এটা তাঁদের জন্য। তাঁরা ঘরে থাকবেন। তাঁদের সংস্পর্শে কেউ যাবে না। যিনি যাবেন, তাঁকে অবশ্যই বিধিমোতাবেক প্রস্তুতি, সাবধানতা অবলম্বন করে যেতে হবে।
হাসপাতালে যেতে হলে আগে থেকে জানিয়ে যেতে হবে। যাঁরা নিয়ে যাবেন, তাঁদের জানাতে হবে। প্রয়োজনীয় সতর্কতা এবং বিধি মেনে নিয়ে যেতে হবে।
কোয়ারেন্টিন দুই ধরণের হয়ঃ হোম কোয়ারেন্টিন এবং প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন। যে কোন একটা পালন করলেই এ ভাইরাস সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাবে অন্যজন।
আইসোলেশন
বাংলা অর্থ বিচ্ছিন্ন থাকা। দেশের বাইরে থেকে যাঁরা এসেছেন, সম্ভাব্য রোগী বা নিশ্চিতভাবে করোনায় আক্রান্ত মানুষের সঙ্গে মিশেছেন, তাঁরা নিজেদের নিজের ঘরে আলাদা রাখবেন। তাঁরা কাউকে স্পর্শ করবেন না। নিজেদের স্বাস্থ্য নিজেরা পর্যবেক্ষণ করবেন। জ্বর মাপবেন। গলায় ব্যথা হচ্ছে কি না দেখবেন।
যাঁরা জ্বর, গলায় ব্যথা, শ্বাসকষ্টে ভুগছেন, তাঁরাও আইসোলেশনে (বিচ্ছিন্ন) থাকবেন। যদিও সবার করোনাভাইরাস পরীক্ষার দরকার নেই। যতক্ষণ না আপনার বয়স ৬০ বছরের বেশি হয় বা রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা দুর্বল হয়, ততক্ষণ পরীক্ষা লাগবে না। ডাক্তারের সঙ্গে ফোনে কথা বলবেন।
আপনি যদি একা থাকেন, সাত দিন নিজেকে মনিটর করুন। যদি পরিবারের সঙ্গে থাকেন, ১৪ দিন সবাইকে বিচ্ছিন্ন থাকতে হবে। পরিস্থিতি বুঝে ১৪ দিন পর চলাচল করতে পারবেন বা পারবেন না।
ধরা যাক, আপনার বাসায় একজন ফ্লুর লক্ষণে ভুগছে। এ জন্য আপনার পরিবার বিচ্ছিন্নতা বা আইসোলেশনে গেল। ষষ্ঠ দিনে আপনার সর্দি শুরু হলো। আপনাকে আরও সাত দিন বিচ্ছিন্ন থাকতে হবে। এর মধ্যে পরিবারের আরেকজন ১৩ নম্বর দিনে ভুগতে শুরু করল, তাহলে তাকে ২০ দিন থাকতে হবে আইসোলেশনে।
সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং
এর মানে সামাজিক দূরত্ব। আপনি অকারণে বাইরে যাবেন না গিয়ে ঘরে থাকা। কোনো জরুরি প্রয়োজনে যেমন খাবারদাবার বা ওষুধ কিনতে বাইরে যেতে পারেন। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন, হাত ধোবেন। ভিড়ে যাবেন না, গণপরিবহনে পারতপক্ষে উঠবেন না, ভ্রমণ করবেন না, সিনেমা–থিয়েটার–প্রার্থনাগৃহে যাবেন না। অন্যের সঙ্গে ছয় ফুট দূরত্ব বজায় রাখবেন। বন্ধুবান্ধবের কাছে যাবেন না, তাঁরাও আসবেন না।
লকডাউন
এর মানে বদ্ধাবস্থা। করোনা না ছড়ানোর জন্য এটা প্রশাসনিক বা আইনগত বা সরকারি ব্যবস্থা। এর মানে, বিমান বন্ধ, সীমানা বন্ধ, চলাচল বন্ধ। রাস্তাঘাট বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে। এটা কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত, নাগরিকের স্বতঃপ্রণোদিত সিদ্ধান্ত নয়। কর্তৃপক্ষ যা বলবে, তা শুনতে হবে।
তাই আসুন, আমরা সচেতন হই, অন্যদের সচেতন করি। মরনঘাতি মহামারি করোনা ভাইরাস মোকাবেলা করতে আমাদের সবার দায়িত্বশীল ভূমিকা দরকার।
সূত্রঃ বিবিসি, প্রথম আলো, একাত্তর টিভি।