কোরআন পড়ুন

খুঁজুন

কিভাবে আদর্শ সিভি ফর্মেট করবেন!

CV Format

অনেকেই আমাকে একটি আদর্শ সিভির ফর্মেট শেয়ার করতে বলেন। তাই আজ এই বিষয়ে কিছু লিখার চেষ্টা করছি। তবে প্রথম কথা যেটা মাথায় রাখতে হবে সেটা হল, আদর্শ সিভি বলে কিছু আসলে নেই। আর সিভির ফর্মেট আপনার দক্ষতার থেকে বেশি গুরুত্ব বহন করে না। যে সাজেশনগুলো আমি লিখছি সেগুলো আপনার নিজেকে ভালোভাবে তুলে ধরার কাজে লাগতে পারে।

১)সঠিক ছবি ব্যাবহার করুন: সিভিতে সবার আগে চোখ যায় ছবিতে। সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে আজকাল প্রায় সবাই যেকোনো ধরণের ছবি সিভিতে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন। আমার মতে আপনি যদি ১০০ টাকা খরচ করে স্টুডিও থেকে একটি ভালো ছবি তুলে আনেন, সেটা আপনি অন্তত ৩-৪ বছর কাজে লাগাতে পারবেন। কাজেই স্ক্যান করা ছবি, মোবাইলে তোলা ছবি, পার্টিতে তোলা ছবি বা ঘরোয়া পোশাকে ছবি সিভিতে দিবেন না। আমার মতে Linkedin প্রোফাইলেও প্রফেশনাল ছবি থাকা উচিৎ।

আর যদি ধর্মীয় কারণে আপনি ধর্মীয় পোশাকে ছবি দেন, তাতে কোন সমস্যা নেই। তবে সেখানেও চেষ্টা করবেন যেন আপনার জামা কাপড় থেকে ফিটফাট ও মার্জিত একটা ভাব ফুটে উঠে।

২) ক্যারিয়ার অবজেক্টিভ পরিষ্কারভাবে লিখুন: আমি যখন আমার প্রথম সিভি লিখি তখন এই বিষয়টি আমাকেও অনেক ভুগিয়েছে। সংজ্ঞা মতে এখানে ১-২ লাইনে আপনাকে আপনার ক্যারিয়ারের লক্ষ্য তুলে ধরতে হবে। আর ইন্টারনেট ঘাঁটলে আপনি যে ফরম্যাটগুলো পাবেন সেগুলো অনেকটা নিচের মতঃ “To achieve a successful career through devotion, commitment and hard work with an opportunity to work with people in an environment of excellence.” “To obtain a growth oriented job in a reputed organization that provides a fully professional working environment and where my creativity, sincerity and skills are the evaluating factors for recognition and job performance.”

উপরের ২টি ক্যারিয়ার অবজেক্টিভে কিন্তু ভুল কিছু নেই। সংজ্ঞা মত ইংরেজি গ্রামার ও নির্দেশনা মেনে সিভি তৈরি করলে এভাবেই লিখতে বলা হয়ে থাকে। তবে পৃথিবী গত ১০ বছরে অনেক পাল্টে গেছে। এখন এসব ফর্মালিটি মেনে চলা হয় না। এখন যা সহজ, বোধগম্য ও কার্যকর মানুষ তাই করতে পছন্দ করে। উপরের উদাহরণে আপনি দেখুন টেনে লম্বা করা বাক্যগুলো পড়তে আপনাকে কতো দম খরচ করতে হয়। আর এগুলো তো আমি ছোট ২ টা উদাহরণ দিলাম। আরও বড় উদাহরণও দেয়া যেতে পারতো। এখানে অনেক ভালো ভালো কথা বলা হয়েছে, যা আসলে অনেকটাই বলার জন্য বলা। গাল ভরা কথা দিয়ে লাইনগুলো সাজানো কিন্তু আসল উদ্দেশ্য ও আপনার নিজের বিষয়ে আসল কথাগুলোই কিন্তু বলা হল না। আর একারণেই দেখা যায় খুব কম মানুষই এই সেকশনটি পড়ে।


আরো পড়ুন:

তাহলে আর এটা লিখে লাভ কি? আমি নিজের সিভিতে এভাবে আমার ক্যারিয়ার অবজেক্টিভ লিখতে ইচ্ছুকঃ I am very passionate about computer and programming since my university life. I dream to be an expert software engineer so that I can build professional and useful software that has business value. I am looking for a senior software engineer position in a reputed software company that can help me to achieve my goal.

এখানে আমি টেনে লম্বা করা কোন একটি বাক্য লিখিনি। কোন জটিল বাক্যও ব্যাবহার করিনি। আমি যা লিখেছি আমরা সাধারণত সব সময় এভাবেই লিখে থাকি। আমি এখানে তুলে ধরেছি আমার প্রোগ্রামিং এর প্রতি যে ভালোবাসা আছে সেই কথা। তার সাথে আমি তুলে ধরেছি আমি কোন পোস্টে অ্যাপ্লাই করতে ইচ্ছুক। আমি আরও তুলে ধরেছি যে আমি কি ধরণের কাজ করতে চাই ও আমার ভবিষ্যৎ লক্ষ্য কি।

আশা করি আমার কথা বুঝতে পেরেছেন। তবে আমার এই অবজেক্টিভ যেন আপনি কপি করে না ব্যাবহার করেন সেটা লক্ষ্য রাখবেন। কারণ যদি কপি করেন তাহলে কারো না কারো সাথে সেটা মিলে যাবে আর চাকরিদাতা সেটা বুঝতে পারবেন। সহজ কথা লিখতে বলেছি, এখন নিজের মত করে লিখুন।

৩) সঠিক ক্রম অনুসরণ করুন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আগে লিখুন: অনেকেই সিভিতে ক্যারিয়ার অবজেক্টিভের পর শুরু করেন নিজের একাডেমীক রেজাল্ট দিয়ে। বিশেষ করে ফ্রেশাররা এটা বেশি করে থাকেন, কারণ তাদের বলার মত অভিজ্ঞতা বা প্রোজেক্ট থাকে না। আমি মনে করি অভিজ্ঞতা দিয়ে সিভি শুরু করা উচিৎ। যদি অভিজ্ঞতা না থাকে সেক্ষেত্রে দক্ষতা দিয়ে শুরু করা উচিৎ। অর্থাৎ আমার মতে সঠিক ক্রম এমন হবেঃ সবার উপরে ডান দিকে ছবি থাকবে, বাম দিকে থাকবে আপনার নাম, আপনার একটা রোল (যেমনঃ Full stack Asp.net web developer), email, mobile, address ইত্যাদি।

এরপর, i) ক্যারিয়ার অবজেক্টিভ ii) অভিজ্ঞতা (ইন্টার্নশিপ ও হতে পারে) iii) দক্ষতা (অর্থাৎ আপনি কি কি বিষয়ে দক্ষ তার বর্ণনা) iv) প্রোজেক্ট ও প্র্যাক্টিক্যাল কাজ v) একাডেমীক রেজাল্ট vi) অন্যান্য দক্ষতা (Extracurricular activities) vii) নিজস্ব তথ্যাদি (Personal information) viii) রেফারেন্স এতে হেরফের হলে যে খুব বেশি সমস্যা তা কিন্তু নয়, আর অন্যরা হয়ত অন্য কোন অর্ডার পছন্দ করতে পারে। তবে আমার এটা পছন্দ কারণ এতে যে বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ বেশি সেগুলো আগে রাখা হয়েছে।

এরপর আরেক ধরণের অর্ডার আছে সেটা হল এই অর্ডারের ভিতরে। যেমন ২ নম্বরে অভিজ্ঞতা লিখতে গিয়ে অনেকে এভাবে লেখেনঃ c/c++, html, css, javascript, java, python যারা এভাবে লিখেন আমার ধারণা তারা লেখার সময় এটা চিন্তা করে লেখেন যে তিনি কোনটা আগে শিখেছেন অথবা কোনটা আগে শিখার কথা। আমার মতে আপনি যেটা সবচেয়ে ভালো জানেন আর যে ট্র্যাকে জব খুঁজছেন সেটা আগে লিখবেন। লিস্টটা আপনার দক্ষতার উপর নির্ভর করে সাজাবেন, কোনটা আগে শিখেছেন তার উপর নয়। কাজেই যে পাইথন ভালো জানে ও সেই ট্র্যাকে চাকরি খুজছে সে এভাবে লিখবে- Python, Java, Javascript, C/C++, HTML, CSS এখানে আমি পাইথন আগে রাখলাম কারণ আমি এটা সবচেয়ে ভালোভাবে শিখেছি ও ইদানীং এটা নিয়ে কাজ করছি। আর আমি এই বিষয়ে জব খুজছি। জাভা আমার ২য় পছন্দ। আমি যদি একান্ত পাইথনের জব না পাই বা অফিসে আমাকে পাইথনের বাইরে কোন কিছুতে কাজ করতে বলা হয় তাহলে জাভা হলে আমি চালিয়ে নিতে পারবো। এরপর Javascript কারণ এটা পাইথন বা জাভা নিয়ে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট করতে গেলে আমার কাজে লাগবে। C/C++ এরপর কারণ এটা আসলে আমি এখন ক্যারিয়ার হিসাবে দেখছি না কিন্তু যেহেতু আমি প্রোগ্রামার আমি প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজগুলো আগে লিখবো, তাই HTML, CSS এর আগে আর অন্য সব ল্যাঙ্গুয়েজ এর পরে এটাকে রাখলাম। এরপর HTML, CSS কারণ ওয়েব ডেভেলপমেন্ট করতে গেলে এগুলোও জানা থাকা লাগে। তবে আমি যেহেতু ফ্রন্টএন্ড ডেভেলপার হব না কাজেই এটা লিস্টে পিছনে রাখলাম। এটা একটা উদাহরণ, যে যার ট্র্যাক ও পছন্দ মত এভাবে গুরুত্ব বুঝে লিস্ট সাজাবে।

আর অভিজ্ঞতার লিস্টে আপনি সবার আগে রাখবেন আপনার লেটেস্ট জব কে। আর সবার পরে থাকবে আপনার প্রথম জব বা ইন্টার্নশিপ। এভাবে ক্রমানুসারে সাজাবেন। প্রোজেক্ট এর লিস্টে আপনি আবার প্রথমে আপনার সেরা প্রোজেক্টকে রাখবেন। এরপর ২য় সেরা, এরপর ৩য় সেরা এভাবে।

৪) অপ্রয়োজনীয় বিষয় বাদ দিন: অনেককে দেখা যায় সিভিতে এমন সব প্রোজেক্টের কথা লিখেন যেগুলো হাস্যকর। যেমনঃ Tic-Tac-Toe, CGPA Calculator, Hangman game ইত্যাদি। আপনার করা এসব প্রোজেক্ট বা প্রোগ্রাম সিভিতে উল্লেখ করার মাধ্যমে আপনার শিশুতোষ মানসিকতারই প্রকাশ পায়। আপনি যে সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট দুনিয়াতে এইসব বিষয় উল্লেখ করা জরুরী মনে করেছেন তাতে প্রমাণ হয় এই ফিল্ডের জটিলতা সম্পর্কে আপনার ধারণা ঐ Tic-Tac-Toe গেম তৈরি করার মতই আর একারণেই আপনি এটা তুলে ধরার কথা চিন্তা করতে পেরেছেন। আলতু ফালতু প্রোজেক্ট বাদ দিয়ে ৩-৫ টি সেরা প্রোজেক্ট সম্পর্কে ভালোভাবে লিখুন। এই ৩-৫ টি প্রোজেক্ট নিয়ে অনেক কিছু লেখার আছে। আপনি এই প্রজেক্টে কি কি নতুন জিনিস করেছেন। এই প্রোজেক্টের বিশেষত্ব কি ছিল, এখানে আপনার রোল কি ছিল। নিজেকে বড় করা যায় এই রকম হতে হবে এই প্রোজেক্টগুলো। আপনি এখানে খুব ভালো কিছু প্রোজেক্টের কথা লিখলেন কিন্তু আবার এই প্রজেক্টে আপনার রোল ছিল টেস্টিং করা, এমন যেন না হয়। আপনি নিজে মূল ভুমিকায় ছিলেন এমন ভালো ৩-৫ টি প্রোজেক্টের খুঁটিনাটি ৫-৬ লাইনে আপনি তুলে ধরতে পারেন। প্রতিটি লাইন যেন প্রমাণ করে যে এটা একটা ভালো কাজ ছিল।

আপনি আরও প্রোজেক্ট করে থাকলে সংক্ষেপে সেগুলোও তুলে ধরবেন যদি সেগুলো ভালো মানের প্রোজেক্ট হয়। তবে সেগুলোতে প্রয়োজন না পরলে ৫-৬ লাইন খরচ না করে ১-২ লাইনে তুলে ধরতে চেষ্টা করুন যাতে সিভি অনেক বড় হয়ে না যায়।

৫) প্রমাণ দিতে হবে: আমি অনেক সিভিতে ইউনিভার্সিটিতে করা অনেক গাল ভরা প্রোজেক্ট বা রিসার্চ টপিক এর নাম দেখি। আপনি ভালো প্রোজেক্ট করে থাকলে সেটা প্রমাণ দিতে হবে, সোর্স কোডের লিংক শেয়ার করুন। গিটহাবে প্রোজেক্ট রাখতে পারেন। গিটহাবের প্রথম পাতায় কিছু স্ক্রিনশট ও বর্ণনা রাখলে ভালো হয়। যদি টপ সিক্রেট প্রোজেক্ট হয় (যেটা আমাদের দেশের ইউনিভার্সিটি শিক্ষার্থীরা খুব একটা করে না) তাহলে সোর্স কোড শেয়ার করতে না পারলে কেন শেয়ার করা যাবে না সেটা তুলে ধরুন। ও উল্লেখ করুন যে কারা এটা ব্যাবহার করছে। কারণ এমন গুরুত্বপূর্ণ প্রোজেক্ট হলে নিশ্চয়ই সেটা এখন কোথাও ব্যাবহার হচ্ছে। মোবাইল এপ তৈরি করে থাকলে উল্লেখ করুন প্লেস্টোরের লিংক। আর কত মানুষ সেগুলো ডাউনলোড করেছে ও কত রেটিং দিয়েছে। আপনার করা এপ যদি মানুষ ব্যাবহার না করে তাহলে আপনার এই এপ তেমন মূল্য বহন করে না। সাধারণ মানের এপ বানানো খুব সহজ, কাজেই অনেকে অনেক সহজ এপ বানিয়ে নিজেকে সফল মনে করে। সফল এপ তৈরি করা অনেক কঠিন। কাজেই আপনার রেটিং আর কতো মানুষ সেটা ব্যাবহার করে, সেটা এখানে গুরুত্ব বহন করবে। এমনকি যদি ৫০০ জনও ব্যাবহার করে সেটাও অনেক ভালো, কেবল আপনি ব্যাবহার করার থেকে। আর আজেবাজে আইডিয়া নিয়ে তৈরি করা এপ না দেয়াই ভালো।

এমন কিছু দিন যেটা আপনার দক্ষতা প্রমাণ করে। যদি রিসার্চ করে থাকেন তাহলে কোথায় পেপার পাবলিশ করেছেন দিতে হবে। যেসব রিসার্চ খালি ইউনিভার্সিটির চার দেয়ালে থেকে যায় সেগুলো আমি গুরুত্ব দেই না। কাজেই রিসার্চ পাবলিশ হলেই কেবল বুঝা যাবে সেটা গুরুত্ব দেয়ার মত। কাজেই গালভরা এই সেই রিসার্চ যদি পাবলিশ করতে না পারেন তাহলে সেটার উপর ভরসা করবেন না। এমন কয়েকজনকে আমি সিলেক্ট করেছি যারা সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট ও প্রোগ্রামিং নিয়ে তেমন কোন কিছুই সিভিতে উল্লেখ করতে পারেননি কিন্তু তাদের IEEE বা অন্য কোন ভালো আন্তর্জাতিক জার্নালে পাবলিকেশন আছে। তাদের আমি সুযোগ দিতে পারি যে যদি তারা কিছুটা প্রমাণ করতে পারে প্রোগ্রামিং, তাও তাদের নেয়া যায়। কারণ তাদের মধ্যে যোগ্যতা আছে। হয়ত তারা এখন সেটা অন্য কাজে ব্যাবহার করেছেন, তবে যোগ্য মানুষ অন্য কিছু চেষ্টা করলেও করতে পারে। কাজেই তাদের প্রাথমিক সুযোগ দেয়া হয়েছে। কিন্তু অনেক বাঘা বাঘা রিসার্চ এর নাম ছিল এমন অনেকে বাদ পরেছেন কারণ তাদের কোন পাবলিকেশন নেই বা তাদের রিসার্চ কেউ ব্যাবহার করছেন না। কেবল স্যার এর কাছে জমা দেয়া রিসার্চ মূল্যহীন। যদি আপনার রিসার্চ আসলেই খুব ভালো কাজ হয়ে থাকে তাহলে সেটা পাবলিশ করতে হবে অথবা কোথাও সেটা কেউ ব্যাবহার করছে এমন হতে হবে। কোন প্রতিষ্ঠান যদি আপনার রিসার্চ ব্যাবহার করে থাকে বা আপনাকে এর জন্য কোন সনদ দিয়ে থাকে তাহলে সেটা গুরুত্ব পাবে।

যারা প্রোগ্রামিং কনটেস্ট করেন তাদের অনেকের সিভিতে প্রবলেম সলভ ছাড়া কিছু থাকে না। কিন্তু দেখা যায় ৫০০-১০০০ অফলাইন সল্ভ করেছেন কিন্তু ICPC, NCPC তে ৩০ এর ভিতরে নাম নেই। উল্লেখ করছেন যে আপনি ১৫-২০ টা কনটেস্ট করেছেন, বিভিন্ন জাজে আপনার ১০০০ প্রবলেম সল্ভ আছে। কিন্তু রিয়েলটাইম কনটেস্টে আপনার কোন উল্লেখ করার মত রেঙ্ক নেই। এটা প্রমাণ করে যে আপনি এখানে ভালো করতে পারছেন না। কাজেই অফলাইন সল্ভ যতই থাকুক এটা আপনার প্রোগ্রামিং স্কিল প্রমাণ করে না। কাজেই এর উপর ভরসা করবেন না। অনেকে আবার উল্লেখ করেন যে ৫০ এমনকি ১০০ র নিচে তার টিমের রাঙ্ক ছিল। এটা উল্লেখ করার থেকে মনে হয় না করাই ভালো। কাজেই যারা কনটেস্ট করেন আর তাদের রেজাল্ট এই রকম তাদের বলব খালি কনটেস্ট এর ভরসায় না থেকে অন্য দক্ষতা যোগ করতে। কারণ যদি আপনি অন্য দিকে এগিয়ে থাকেন তাহলে আপনার এই অফলাইন সল্ভ আপনাকে কিছুটা বোনাস দিবে, কিন্তু খালি কনটেস্ট করলে প্রথম ৩০ এর ভিতরে রেঙ্ক থাকতে হবে।

অনেকে আবার লেখেন যে Intra University কনটেস্টে তারা চ্যাম্পিয়ন বা রানার আপ। এটাও কোন গুরুত্ব বহন করে না। আপনাকে ভালো রেজাল্ট করতে হবে ন্যাশনাল বা ইন্টার ন্যাশনাল কনটেস্টে, যদি আপনি কনটেস্ট প্রোগ্রামার হিসাবে নিজেকে পাস করাতে চান। আমি যারা ৩০ এর ভিতরে রেঙ্ক ছিল তাদের সিলেক্ট করেছি এমনকি যদি তাদের অন্য কোন স্কিল নাও থাকে। এর বাইরে সবাই বাদ পরেছে। আর লাইভ কনটেস্টে অংশগ্রহণ কোন দক্ষতা প্রমাণ করে না। অনেকেই লিখেছেন যে তারা ১০-১৫টি লাইভ ও ২০-৩০টি অনলাইন কনটেস্ট করেছেন, কিন্তু কোন কনটেস্টের রেজাল্ট লেখেন না বা লিখলেও উল্লেখ করার মত রেজাল্ট থাকে না। সেক্ষেত্রে আপনি কোন সুবিধা পাবেন না। যে কনটেস্টে অংশগ্রহণ করেছেন সেই কনটেস্টে কতোগুলো টিম ছিল আর আপনার অবস্থান কতো ছিল এটা উল্লেখ করবেন। না হলে আপনি গুরুত্ব পাবেন না। অনেকে অনেক এই সেই প্রোজেক্ট এর কথা লেখেন, প্রোজেক্টগুলো যদি আসলেই ভালো মানের প্রোজেক্ট হয়ে থাকে প্রমাণ দিন যে কয়টা কোম্পানিতে আপনি সেটা বিক্রি করেছেন, কারা কারা সেটা ব্যাবহার করছে। প্রয়োজনে ফ্রিতে দিন, তাও যদি তারা ব্যাবহার করে সেটার মূল্য আছে। অনেকে লাইভ প্রোজেক্টের লিংক দিয়েছেন, এটা খুবই ভালো। সেক্ষেত্রে অনেক মূল্য পাওয়া যায়। লাইভ লিংক অনেক গুরুত্ব বহন করে। আপনার করা যে প্রোজেক্ট কেউ ব্যাবহার করে না, কেবল আপনি কিছু যেন তেন কোড করে স্যার এর কাছে জমা দিয়ে আপনার পিসির কোন এক জায়গায় ফেলে রেখেছেন সেটা কোন গুরুত্ব বহন করে না। আপনাকে সেক্ষেত্রে নিজের যোগ্যতা ইন্টারভিউ দিয়েই প্রমাণ দিতে হবে। লাইভ প্রোজেক্ট থাকলে সেটা অনেক গুরুত্ব বহন করে। সেক্ষেত্রে আপনার ক্রেডিট অনেক বাড়বে।

৬) সিভিতে নিজেকে তুলে ধরতে হবে: সিভি খুব লম্বা করা উচিৎ নয়। আমি বলব ৩-৪ পাতার বেশি না হওয়াই ভালো। তবে অনেকে আবার আজকাল অনেক টুল ব্যাবহার করে ১ পাতার খুব সুন্দর সিভি তৈরি করছেন। সেটা অন্য দেশে হলে কাজে লাগতো যেখানে মানুষ কোন কিছু “জানি” বলা মানে সেটা সে জানে। আমাদের দেশে মানুষ বলে অনেক, পারে অনেক কম। কাজেই আপনাকে নিজেকে ভালোভাবে প্রমাণ করতে হবে সিভিতে। এক পাতার যে সুন্দর সিভি আপনি বানাচ্ছেন সেখানে যদি আপনি কি কি জানেন, আপনার প্রোজেক্ট ও অভিজ্ঞতার লিস্ট তুলে ধরা না যায় তাহলে কিন্তু হবে না। সিভিতে যেসব বিষয় কোন প্রাথমিক গুরুত্ব বহন করে না তা হল, আপনার নাম পরিচয়, আপনার হবি, আপনি কি কি ভাষা জানেন। এগুলো অবশ্যই আমি বাংলাদেশ ও এই দেশের সফটওয়্যার ফিল্ডের প্রেক্ষিতে বলছি। এগুলো গুরুত্ব পাবে যখন আপনাকে নেয়া হবে বলে মোটামুটি সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে তখন। কাজেই আপনার সিভির বেশিরভাগ যদি শুধু এগুলোই থাকে তার মানে আপনার সিভি ফাঁকা। দক্ষতা যদি বাড়াতে না পারেন তাহলে সিভিতে নিজেকে প্রমাণ করা যাবে না। ফর্মেট দিয়ে সিভি পাস হয় না। ফর্মেট ভালো হলে ভালো, সেটা পরের বিষয়। আগের বিষয় আপনি কি কি জানেন আর আপনি আসলেই সেগুলো জানেন কিনা সেটা প্রমাণ হওয়া। কাজেই নিজের সিভি পড়ে দেখবেন যে আপনি নিজেকে একজন দক্ষ ক্যান্ডিডেট হিসাবে তুলে ধরতে পারছেন কিনা। যারা ডিজাইনার বা নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ার তাদের বেলায় জাস্ট তাদের স্কিল আর জব টাইটেল ধরে নিবেন। আমার পোস্টের বাকি সব কিছু একইভাবে আপনার জন্য প্রযোজ্য হবে।

৭) সিভির ফন্ট ভালোভাবে নির্বাচন করুন: সিভির জন্য আপনাকে আহামরি ডিজাইন করতে হবে এমন নয়, তবে অনেক সিভি বানানোর টুল আছে (যদি সেগুলো দিয়ে ১ পাতার বেশি লেখা যায় তাহলে ব্যাবহার করবেন) অথবা MS Word টেম্পলেট অনলাইনে খুজলে পাবেন। অথবা MS Word এর ডিফল্ট ফন্ট, হেডার ব্যাবহার করলেও হবে। অনেকে সিভি পাঠিয়েছেন ৮-৯ ফন্ট দিয়ে, এতো ছোট ফন্ট যে পড়াই যায় না। বুঝলাম না কেন এটা করেছেন। ১১ ফন্ট যেটা ডিফল্ট থাকে সেটা ব্যবহার করবেন নরমাল প্যারার জন্য। আবার অনেকে এক এক পাতায় এক এক সাইজের ফন্ট ব্যাবহার করেছেন। এগুলো গাফিলতি ছাড়া আর কিছু না। অনেকে হেডার বা প্যারার মাঝে এক এক জায়গায় এক এক পরিমাণ গ্যাপ দিয়েছেন। অনেকে বানান ভুল লিখেছেন। অনেকে তো নিজের তথ্য এর জায়গায় Dummy তথ্য দিয়েই পাঠিয়ে দিয়েছেন। যেমন – I have passed from university Name and I have done Project 1 & project 2. এদের যারা চাকরি দিবে তারা বিপদে পরবে। কাজেই এমন গাফিলতি করে চাকরির আশা করবেন না।

৮) নিজের সিভি নিজে চেক করুন আগে: নিজের সিভি বারবার পড়বেন, অন্যদের দিয়ে পড়াবেন। যখন নিশ্চিত হবেন যে ভুল নেই তখন সাবমিট করবেন। এজন্য আগেই সিভি মোটামুটি তৈরি করে রাখা ভালো। যাতে তাড়াহুড়া করে সাবমিট না করা লাগে। তবে আবার অনেক দিন আগের সিভি সাবমিট করা ভালো হবে না। সাবমিট করার আগে আপডেট করা লাগলে সেটা করে তারপর পাঠাবেন।

৯) উল্লেখ করার মত দক্ষতা থাকা চাই: আমি বেশ কিছু সিভি সিলেক্ট করেছি যাদের ফরম্যাট ভালো ছিল না, তাদের অনেক ভুলও ছিল কিন্তু তাদের সিভিতে এমন কিছু দক্ষতার উল্লেখ ছিল যা নজর কেড়েছে। যেমন ক্লাউড নিয়ে দক্ষতা, ওয়েব সিকিউরিটি নিয়ে দক্ষতা বা এরকম আরও কিছু। এমন কোন দক্ষতা যদি আপনার থাকে যা অন্যদের নেই, এটা আপনাকে অবশ্যই ইন্টারভিউতে কল পেতে সাহায্য করবে। নরমাল প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ বা ফ্রেমওয়ার্ক সবার সিভিতেই থাকে। সেই এক গৎবাঁধা জিনিস আপনাকে কোন আলাদা মূল্য দেয় না। আপনাকে এমন কিছু জানতে হবে বা এমন কোন কাজ করতে হবে যেটা অন্য কেউ জানে না বা করতে পারে না, অন্তত কম মানুষ সেটা জানে।

যারা হাতে কলমে কাজ করেছেন তাদের সিভি থেকে সেটা খুব সহজেই বুঝা গেছে। একজন যে এক্সপার্ট বা ভালো মানের কাজ করে সে অনেক টুলস বা ফ্রেমওয়ার্ক তার নিজের কাজের সুবিধার জন্য ব্যাবহার করে। আর যে সাদামাটা কাজ করে সে এগুলো নিয়ে চিন্তা করে না, সে কেবল সংখ্যা বাড়াতে চেষ্টা করে। যেমন অনেক এপ ডেভেলপার সিভি দিয়েছেন যারা এই সেই অনেক এপ তৈরি করেছেন। তাদের এপগুলো পাবলিশ হয়নি, কোন ব্যাবহারকারীও নেই। আবার কিছু এপ ডেভেলপার ছিল যারা এপ কম বানিয়েছেন কিন্তু তারা সেগুলো পাবলিশ করেছেন, অনেকে ব্যাবহার করছে আর তারা অনেক আনকোরা ফ্রেমওয়ার্ক ও টুলস ব্যাবহার করছেন, কারণ প্রফেসনাল কাজ করতে গেলে সেগুলো ছাড়া কাজ করা কঠিন। কাজেই তাদের সিভি থেকেই আলাদা করা যায় কে প্রেক্টিক্যাল কাজ করেছেন আর কে করেননি।

১০) ট্র্যাক ধরে ক্যারিয়ার গড়ুন: এটা সরাসরি সিভি লেখার সাথে জড়িত নয়। তবে আমি এমন বেশ কিছু সিভি পেয়েছি যেখানে আমি বিভ্রান্ত হয়ে গেছি যে যারা সিভি দিয়েছেন তারা আসলে কি জব খুঁজছেন। দেখা যায় তারা সিএসই থেকেই পাস করেছেন, কিন্তু এরপর কোথাও ডাটা এন্ত্রি করেছেন, কোথাও কাস্টমার সাপোর্ট দিয়েছেন, কোথাও ফেসবুক মার্কেটিং করেছেন, কোথাও SEO করেছেন, কোথাও অফিস এসিসটেন্ট ছিলেন। আবার ক্যারিয়ার অবজেক্টিভ থেকেও বুঝা যাচ্ছে না যে তারা আসলে এখন কোন ধরণের জব খুঁজছেন। মনে হল তারা শুরুতে যেমন বিভ্রান্ত হয়ে যখন যেমন জব পাচ্ছেন করছেন, এখনোও তাদের কোন উদ্দেশ্য নেই যে তারা কি করতে চান। তাদের জাস্ট হয়ত একটা জব দরকার। এই ধরণের মানুষদের ক্যারিয়ার আসলে ধ্বংসের মুখে। কাজেই প্রথম থেকেই চেষ্টা করবেন যেন ক্যারিয়ার সঠিক পথে থাকে। আর সব সময় সিভি লেখার সময় লক্ষ্য রাখবেন যে আপনি কোন ট্র্যাকে ক্যারিয়ার গড়তে চান সেটা যেন আগাগোড়া আপনার সিভিতে স্পষ্টভাবে ফুটে উঠে।

যারা এখনই চাকরি দরকার মনে করে এখানে ভুল পথে পা বাড়ায় তাদের ফিরে আসতে অনেক কষ্ট হবে। কারণ যখন আপনি লিখবেন যে আপনি ২ বছর এই সব অকাজ করে বেরিয়েছেন তখন কোন সফটওয়্যার কোম্পানির আপনাকে প্রোগ্রামার হিসাবে নিয়োগ দিতে সাহস হবে না। আবার আপনি পাস করেছেন ২ বছর আগে, কাজেই এই ২ বছর বসা ছিলেন সেটাও বলতে পারবেন না। কাজেই সব দিক থেকে আপনি প্রশ্নের মধ্যে পরে যাবেন। তবে যারা ভুল পথে চলে যান তাদের সিভিতে সঠিক পথে ফিরে আসার জন্য অনেক সাবধানে সিভি লিখতে হবে আর অবশ্যই নিজেকে প্রমাণ করতে হবে। সেটা অসম্ভব নয়, তবে অনেক কঠিন হবে।  

পরামর্শ দিয়েছেন- জালাল উদ্দিন।

Tags: ,