হালদার মা মাছের ডিম (পোনা)। আপনি কল্পনা করতে পারবেননা দেশের মাছের কতটুকু চাহিদা মেটাবে এ পোনা। এর বাজার মূল্যের কথা নাই বললাম। আমারও ধারণার বাইরে। দক্ষিন আফ্রিকার জোহানেসবার্গ স্বর্ণ খনীর জন্য বিখ্যাত হলে আমার হালদা মাছের প্রাকৃতিক প্রজননের জন্য বিখ্যাত। যদিও হালদা পাড় এবং এর আশে পাশের মানুষ তা কতটুকু জানে জানা নাই। তবে এখন জানছে এবং কিছুটা সচেতন হচ্ছে। তবে হালদা পাড়ের কেউ না হয়েও একজন আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে জানাচ্ছেন হালদাকে পরম ভালোবেসে।
হাটহাজারীর ইউ এন ও জনাব রুহুল আমিন। দায়িত্বের কাছে তিনি রাতদিন বুঝেননা। যেখানে অনিয়মের সংবাদ পাচ্ছেন, ছুটে যাচ্ছেন। হালদায় জাল ফেলেছে এমন কোন খবর পেয়েছেন, তো ছুটে গিয়েছেন। ইন্ডাস্ট্রির বর্জ্য হালদায় মেশছে, তিনি ছুটে গিয়ে বন্ধ করেছেন। কোন পারিবারিক সেপ্টিক ট্যাংকের নল হালদায় ফেলেছে খবর পেয়েছেন, ছুটে গিয়ে তা বন্ধ করেছেন।
যিনি করে যান তাঁর কাঁধেই যেন যত বিপদ! হালদায় মা মাছ পোনা ছাড়বে, এমন অপেক্ষায় ক্ষণ গুনছেন জেলেরা। ইউএনও সাহেবও সম্ভবত অপেক্ষায় সে মহেন্দ্রক্ষণের। পরিশ্রম এবং দায়িত্বের ফল দেখবেন হাসিমুখে। এর আগেই ভয়ংকর এক বিপদের সম্মুখীন হলো হালদা। হাটহাজারীর অদুরে ফার্নেস তেলবাহী রেলের ওয়াগন এক্সিডেন্ট করেছে। হাজার হাজার লিটার তেল হালদার সাথে সংযুক্ত ছোট খালে পড়েছে। হালদার জীববৈচিত্রের জন্য ভয়ংকর হুমকি। তেলের শ্রুত হালদার দিখে। মা মাছ গুলোর কি হবে? হালদা নিয়ে এতো পরিশ্রম তাহলে মাটি হয়ে যাবে?
ইউএনও সাহেব নাছোড় বান্দা! তেলের এ শ্রুত থামানোর যন্ত্রপাতি নাই। মরার উপর খাড়ার গাঁ হয়ে ধেয়ে আসছে ভয়ংকর ফণী! ইউএনও সাহেব ম্যাজিক দেখালেন। এলাকাবাসীকে সংগঠিত করে উদ্বুদ্ধ করলেন। তারা কলসি, থালা, বাসন ইত্যাদি নিয়ে খালে নামবেন। পানি আর তেলে টইটম্বুর করা সে পানি সংগ্রহ করবেন। বিনিময়ে টাকা পাবেন! এলাকাবাসীকে নিয়ে একে একে সনাতন পদ্ধতিতে ১১ টা বাঁধ নির্মান করলেন। তেলের শ্রুত আপাতত থামল।
পদ্মা অয়েলকে ডেকে দেখালেন। তাঁরাও রাজি হলেন একটা ন্যুনতম মূল্যে সে তেল এলাকাবাসী থেকে সংগ্রহ করবেন। যে কথা সেই কাজ। এলাকাবাসী নেমে পড়লেন খালে। কলসি, ডেকসি-পাতিল, বালতি করে কাদাঁ-তেল সংগ্রহ করে নিল তাঁরা। ইউএনও সাহেব আশায় বুক বাঁধছেন। তেলের শ্রুত আটকালেন। অনেক জীবের প্রাণ বাঁচলো। মা মাছ রক্ষা পেল। রাষ্ট্রের কোষাগারে হাজার কোটি টাকা সঞ্চয় করিয়ে দিলেন একজন ইউএনও। তিনি চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার দ্বায়িত্বরত ইউএনও রুহুল আমিন।
অভিবাদন ম্যান!