রোগাক্রান্ত হলে মানুষ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়। চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চললেই মেলে আরোগ্য লাভের সুযোগ। দিন যত গড়াচ্ছে চিকিৎসা বিজ্ঞানও উন্নত হচ্ছে। পাশাপাশি নতুন জটিল রোগও দানা বাঁধছে দেশে দেশে। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) পুরো বিশ্বকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। এ ভাইরাস সংক্রমণের ফলে মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘতর হচ্ছে পৃথিবীব্যাপী। বিজ্ঞানীরা রাতদিন পার করছে গবেষণাগারে এ ভাইরাসের প্রতিষেধক উদ্ভাবন করতে। চিকিৎসার সব ধাপ শেষ করে যখন কোন মানুষ সুস্থ হয়না, কী করে তখন? ভুক্তভোগী ছাড়া এটা কারো জানা বা বুঝার কথা না!
আজ এমন একজনের কথা বলবো। যিনি চিকিৎসার সব ধাপ শেষ করে নিরুপায় হয়ে ব্যকুল মনে এক বড় পদ্য লিখে ফেলেছিলেন। মিশরের বুসির নামক জনপদে তাঁর জন্ম ১২১৩ সালের ৭ মার্চ, হিজরি ৬০৮ এর ১লা শাওয়াল। নাম শরফুদ্দিন মুহাম্মদ ইবনে সাঈদ আল বুসরি। বহু ভাষার পণ্ডিত, সাহিত্যিক ও প্রতিতযশা একজন কবি ছিলেন তিনি। একজন কামেল বুযর্গ হিসেবেও পরিচিত ছিলেন। বুসিরি নামক স্থানে জন্মেছেন বলে তিনি ইমাম বুসিরি নামে খ্যাতি লাভ করেন।
কবি এক সময় পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হয়ে সম্পূর্ণ অচল হয়ে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন। সবরকম চিকিৎসার পরেও কবি আরোগ্য লাভে ব্যর্থ হন। অবশেষে কবি মানবতার নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর প্রশংসায় এক দীর্ঘ কবিতা রচনা করেন। সে প্রশংসাসূচক কবিতার মাধ্যমে তিনি সৃষ্টি কর্তার কাছে আরোগ্য কামনা করলেন। কবিতা শেষ করে এক জুমার রাতে নির্জন ঘরে গভীর মনোযোগ ও ভক্তিভরে নিজের রচিত কবিতা (কসিদা) আবৃত্তি করতে থাকেন। আবৃত্তি করতে করতে একসময় ঘুমিয়ে পড়েন। গভীর ঘুমে কবি স্বপ্ন দেখেন, সমগ্র ঘর আলোকিত করে এক মহামানব উপস্থিত হলেন তার ঘরে! কবি চিনতে ভুল করলেন না। ইনিইতো আমার প্রিয় নবী! আনন্দে আত্মহারা কবি সে কসিদা নবীজীকে শোনাতে থাকেন। কবিতার শেষের দিকের চরন- “কাম আবরাআত আসিবান” – “কত চিররুগ্ন ব্যক্তিকে নিরাময় করেছে প্রিয় নবীর পবিত্র হাতের স্পর্শ ” বলার পরেই নবীজী তাঁর পবিত্র হাত মোবারক দিয়ে কবির দেহ মুছে দেন এবং অত্যন্ত খুশি হয়ে নিজের গায়ের নকশাদার ইয়ামনী চাদর দিয়ে কবির শরীর ঢেকে দেন।
কবির স্বপ্ন ভেঙে যায়। নবীজী নাই তাঁর পাশে কিন্তু শরীরে জড়ানো দেখলেন সে ইয়ামনী চাদর! কি আশ্চর্য! কবি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গেলেন এবং মহান আল্লাহর শোকরিয়া আদায় করলেন। খুব সকালে কবি বাজারে গেলেন। পথিমধ্যে স্বীয় বন্ধু শেখ আবু রাজার সঙ্গে দেখা হয়। আবু রেজা কবিকে সে কবিতা শুনাতে অনুরোধ করেন। কবি জিজ্ঞেস করলেন, কোন কবিতার কথা বলছো? বন্ধু গতরাতে নবীজীকে শোনানো সে কসিদার প্রথম দু লাইন উল্লেখ করেন। কবি আবার আশ্চর্য হয়ে বললেন, আমিতো এ কবিতা কাউকে দেখাইনি। আবু রেজা জানালেন, আপনি নবীজীকে যে কবিতা শুনিয়েছিলেন সে সময় আমিও উপস্থিত ছিলাম। শুধু আমিই নই, আপনার এ কবিতা মহান আল্লাহ তাঁর বিশেষ বিশেষ বান্দাদের নিকট পৌঁছে দিয়েছেন!
তদানীন্তন বাদশাহ মালিক তাহিরের প্রধানমন্ত্রী কাজী বাহাউদ্দিন কৌশলে কসিদাটি হস্তগত করেন। তিনি সপরিবারে এ কসিদা বিশেষ সম্মানের সঙ্গে পড়তেন এবং অন্যান্যদের শুনাতেন।
উল্লেখ্য এ কবিতার নাম “আল কাওয়াকিবুদ দুররিয়াহ ফি মাদহি খায়রিল বারিয়াহ”। সংক্ষিপ্ত নাম “কসিদা-এ-বুরদা“। বুরদা শব্দের অর্থ নকশাদার চাদর। এ কসিদায় রয়েছে ১৬৫ শ্লোক আর ১০ টা অধ্যায়। ইউটিউব জুড়ে রয়েছে বিখ্যাত শিল্পীর কণ্ঠে এ কবিতার গান।
করোনা ভাইরাসের ভয়ংকর বিস্তার হচ্ছে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিতে। বিশেষজ্ঞদের মতামত সবাইকে ঘরে অবস্থান করার। পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে বলা হয়েছে। আসুন আমরা সচেতন হই। নিজ নিজ ঘরে অবস্থান করি। পরিবারকে বেশি করে সময় দেই। নিজ নিজ ধর্ম মোতাবেক সৃষ্টিকর্তার কৃপা কামনা করি। সময় পেলে ইমাম বুসিরির অসামান্য এ কবিতা (দরুদ) আবৃতি করি।