কোরআন পড়ুন

খুঁজুন

শব্দদূষণ সম্পর্কে ইসলাম কী বলে!

যত্রতত্র শব্দদূষণ সম্পর্কে ইসলামের চমৎকার নির্দেশনা রয়েছে। যা আমরা বলিনা এবং সচরাচর তেমন কাউকে বলতে দেখিনা। চলুন দেখি এ সম্পর্কে ইসলাম কী বলে!

সম্পত্তি আত্মসাত কিংবা দৈহিক কষ্ট দেওয়াই কেবল যুলম নয় বরং যুলম বা অত্যাচার হল, কোনো জিনিসকে অনুপযুক্ত স্থানে ব্যবহার করা। কারণ, কোনো জিনিসের অপব্যবহার কারো না কারো কষ্টের কারণ হয়ে থাকে। আর যে ধরনের ব্যবহার দ্বারা অন্য মানুষ কষ্ট পায়, ইসলামের বিধানে তা কবীরা (বা বড়) গুনাহ।

কোনো কোনো বিয়ে অনুষ্ঠানে রাত তিনটা পর্যন্ত মাইকে গান-বাজনা চলতে থাকে। আশেপাশের অধিবাসীরা না ঘুমিয়ে রাত পাড় করেন। বিয়ে ছাড়া অন্য অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রেও এ জাতীয় ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। শব্দকে প্রয়োজনের সীমার মধ্যে রাখা এবং আশেপাশের দুর্বল ও অসুস্থ লোকদের প্রতি এবং যারা এ শব্দ শুনতে চায় না তাদের প্রতি এ সকল অনুষ্ঠানের আয়োজকরা আদৌ ভ্রুক্ষেপ করে না।

নিখাঁদ দ্বীনি অনুষ্ঠানেও উচ্চশব্দে মাইক বাজিয়ে লোকজনকে জোর-জবরদস্তি করে শুনতে বাধ্য করা কোনোক্রমেই জায়েয নয়। মসজিদে যে ওয়াজ, বক্তৃতা, যিকর বা তিলাওয়াত মাইকে করা হয় তার শব্দ অনেক দূর পর্যন্ত পৌছানোও জায়েয নয়। প্রায়ই দেখা যায়, মসজিদে অল্প কিছু লোক ওয়ায বা শিক্ষাদানের মজলিসে বসেছে, যাদের কাছে শব্দ পৌঁছানোর জন্য মাইকের কোনো প্রয়োজন নেই কিংবা শুধুমাত্র ভেতরের ‘লাউড স্পিকার’ দ্বারা সুন্দরভাবে কাজ চলতে পারে, কিন্তু তার পরও বাইরের মাইক পূর্ণ শব্দে চলতে থাকে। ফলে এর শব্দ পাড়ার প্রত্যেকটি ঘরে এমনভাবে পৌঁছে যে, কেউ এর প্রভাব থেকে মুক্ত থাকতে পারে না। কোনো কোনো স্থানে জুমআর দিনে পাশাপাশি অবস্থিত বিভিন্ন মসজিদ থেকে মাইকে ফযরের সলাতের পর থেকে জুমআর সলাতের পূর্ব পর্যন্ত বিভিন্ন আলোচনা, তিলাওয়াত, হামদ, নাত, গজল ইত্যাদি অনুষ্ঠান এমন অবিরামভাবে ও উচ্চ শব্দে চলতে থাকে যে, বাড়ির লোকের কথাও শোনা যায় না এবং অসুস্থ লোক প্রয়োজনে একটু শান্তিতে ঘুমাতেও পারে না। আবার অনেক স্থানে খালি মসজিদেই (শ্রোতাবিহীন অবস্থায়) মাইকে ‘টেপ’ চালানো হয় এবং পুরো মহল্লার অধিবাসীদের ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় এই ‘টেপ’ শুনতে হয়। যাদের দ্বীনের সঠিক বুঝ হয়েছে, তারা এমন কাজ করতে পারে না। এ জাতীয় অনিয়ম ঐ সকল মসজিদেই হয়ে থাকে যেগুলোর ব্যবস্থাপনা থাকে দ্বীন সম্পর্কে অজ্ঞ লোকদের হাতে। অনেক সময় তারা এ কাজটি ভাল নিয়তেই (বা ইচ্ছাতেই) করে থাকে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কোনো কাজ বৈধ হওয়ার জন্য শুধু নিয়ত ভাল হওয়াই যথেষ্ট নয় বরং তার পদ্ধতিও সঠিক হওয়া জরুরী।

মনে রাখতে হবে, মাইকের এমন অন্যায় ব্যবহার ইসলাম প্রচারের মূলনীতির পরিপন্থী এবং এর দ্বারা বিরূপ ফলাফলও প্রকাশ পেয়ে থাকে।

একজন বক্তা আয়িশা (রা.) এর ঘরের ঠিক সামনে অত্যন্ত উঁচু আওয়াজে ওয়ায করতেন। ফলে আয়িশা (রা.) এঁর একাগ্রতায় বিঘ্ন ঘটত। আয়িশা (রা.) উমার (রা.) এঁর কাছে (ইসলামী সমাজের মূলনীতি প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে) অভিযোগ করেন যে, এতে (উচ্চস্বরের ওয়াযে) আমার কষ্ট হয়। এর আওয়াজের কারণে আমি অন্যের কথা শুনতে পাই না। উমার (রা.) লোকটির কাছে বার্তা পাঠিয়ে সেখানে ওয়ায করতে নিষেধ করেন। পরে (বিরতির পর ঐ ব্যক্তি আবার একই স্থানে ওয়ায শুরু করলে উমার রা.) তাকে পাকড়াও করেন এবং শাস্তি প্রদান করেন। (আখবারুল মাদীনা, উমার ইবনে শাব্বা প্রণিত, খণ্ড-১, পৃঃ১৫)

ইমাম আহমাদ (রহ.) তাঁর প্রণীত ‘মুসনাদে’ একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন যে, একবার আয়িশা (রা.) মাদীনায় একজন বক্তার জন্য ওয়ায ও প্রচারের নিয়ম-কানুন আলোচনা প্রসঙ্গে বলেন, “নিজের আওয়াজকে তোমার মজলিসে উপবিষ্ট লোকদের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখো এবং তাদেরকেও ততক্ষণ পর্যন্ত দ্বীনের কথা শোনাও যতক্ষণ তাদের মুখমণ্ডল তোমার দিকে ফেরানো থাকে। তারা মুখ ঘুরিয়ে নিলে তুমি কথা বন্ধ করে দাও।.. তারপর তারা আবেদন করলে তাদেরকে দ্বীনের কথা শোনাবে।” (মাজমাউয যাওয়ায়েদ, খণ্ড ১, পৃঃ ১৯১)

(একজন তাবেঈ) আতাহ ইবনে আবি রাবাহ (রহ.) বলেছেন, ‘আলিমের উচিত তার শব্দ যেন মজলিস অতিক্রম না করে (তার ব্যবস্থা করা)।’ (আদাবুল ইমলা ওয়াল ইস্তিমলা, সামআনী কর্তৃক প্রণীত, পৃঃ ৫)

একবার রাসূল (সা.) উমার ফারুক (রা.) এর কাছ দিয়ে অতিক্রম করেন। তিনি তখন তাহাজ্জুদ সলাতে উচ্চস্বরে কুরআন তিলাওয়াত করছিলেন। তখন রাসূল (সা.) তার কাছে উচ্চস্বরে তিলাওয়াত করার কারণ জিজ্ঞেস করেন। উমার (রা.) উত্তরে বলেন, আমি ঘুমন্তদেরকে জাগাই আর শয়তানকে তাড়াই। তখন রাসূল (সা.) বললেন, তোমার আওয়াজকে আরেকটু খাটো করো। (মিশকাত, খণ্ড ১, পৃষ্ঠাঃ ১০৭) আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূল (সা.) যখন তাহাজ্জুদের জন্য জাগ্রত হতেন তখন অতি আস্তে বিছানা থেকে উঠতেন (যেন ঘুমন্তদের ঘুমে ব্যাঘাত না ঘটে)। এ সকল বর্ণনার আলোকে ইসলামের গবেষকগণ একমত যে, তাহাজ্জুদ সলাতে এত উঁচু স্বরে কুরআন তিলাওয়াত করা, যার দ্বারা অন্যের ঘুমের ব্যাঘাত হয়- মোটেও জায়েয নয়।.. এতে বরং গুনাহ হবে। (খোলাছাতুল ফাতাওয়া, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ১০৩, শামী, খণ্ড ১, পৃঃ ৪০৩ ও ৪৪৪)

[মূলঃ ইসলাম ও আমাদের জীবন, মুফতী বিচারপতি তাকী উসমানী সাহেব] পোস্ট সংগ্রহঃ সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া আজহারীর ফেসবুক পেজ