কোরআন পড়ুন

খুঁজুন

মধ্যপ্রাচ্যে আমাদের এম্বাসেডররা!

গত রাশিয়ে বিশ্বকাপ ফুটবলে জাপান এক অনন্য নজির সৃষ্টি করেছিল। ওদের খেলোয়াড়রা ড্রেসিং রুম থেকে বের হওয়ার আগে তা তকতকে পরিষ্কার করে নিত। আর ওদের দর্শকরাও খেলা শেষে গ্যালারি পরিষ্কার করে অনন্য নজির স্থাপন করেছিল। সে ছবিগুলো সোশ্যাল মিডিয়া সমূহে বেশ ভাইরালও হয়েছিল।

গ্যালারি পরিষ্কার করার দ্বিতীয় নজির গড়েছে আমাদের রেমিটেন্স যোদ্ধারা। মধ্যপ্রাচ্যের সংযুক্ত আরব আমিরাতে চলছে এশিয়া কাপ ক্রিকেট। দুবাই স্টেডিয়ামে উদ্বোধনী খেলা বাংলাদেশ আর শ্রীলংকার মধ্যে। এ এক ম্যাচেই কয়েকটা মূহুর্ত বিশ্বের নজর কেড়ে নিয়েছে বাংলাদেশ! টাইগার ড্যাশিং ওপেনার তামিম ইকবাল হাতে প্রচন্ড আঘাত পেয়ে মাঠ ছাড়তে হয় যখন দলের ৩ রানে ২ উইকেট পড়ে যায়। তার মানে তামিম সহ ৩ উইকেট! এর মধ্যে সকলে জেনে যায় তামিমের এশিয়া কাপ মিশন শেষ! ওদিকে গ্যালারির বেশিরভাগ অংশ দখলে রয়েছে সেখানে অবস্থানরত হাজারো প্রবাসী বাঙালি। গ্যালারীতে চলছে সুনসান নিরাবতা। এরপর একটা ভালো পার্টনারশিপ হলো। মুশফিক সেঞ্চুরি করলো আর মিঠুন হাফ সেঞ্চুরি। দলের ২২৯ রানে মুস্তাফিজ রান আউট হয়ে গেলে সকলে ধরে নিয়েছিল শ্রীলংকার টার্গেট মামুলি ২৩০ রান। স্তব্ধ গ্যালারিতে হঠাৎ প্রানের সঞ্চার। তামিম ইকবাল ব্যাট হাতে নেমে পড়েছে। বামহাত ড্রেসিং করা। একহাতে ব্যাট করতে হবে! যার বলে মারতে গিয়ে হাতের রিষ্ট ফেটে যায় সে বোলারকে আবার মোকাবেলা করতে হবে! তাও করলো! এবার টিভি ক্যামেরায় ধরা পড়লো আঘাত পাওয়া হাতের একটা অংশ গ্লাভসের বাইরে। সে জায়গায় আরেকটা বল পড়লে চিরতরে তার ক্যারিয়ার নিভে যেত। মুস্তাফিজ আউট হবার সময় নাকি তামিম টাইগার দলপতি মাশরাফিকে প্রস্তাব দেয়- ‘আমি গিয়ে এক বল খেলবো, আমি যাব’! তামিমের মনোবল দেখে মাশরাফি নিজে গ্লাভস ছিঁড়ে তামিমের হাতে পড়িয়ে দেয়। আহ! দেশের জন্য কি ত্যাগ! এরকম ত্যাগ যে বা যারা করতে পারে দিন শেষে তারা হারেনা। টাইগাররাও জিতল বড় ব্যবধানে।

দ্বিতীয় নজির কে গড়লো? হ্যা! আমাদের রেমিটেন্স যোদ্ধারা। দলের এতোবড় জয় দেখে কোথায় না তারা সেলিব্রেট করবে! বাইরে এসে নাচানাচি করবে। গ্যালারির চেয়ারে দাঁড়িয়ে লাফালাফি করবে! যা কিনা বাঙালি দর্শকরা করতে সিদ্ধহস্ত। না, তা করেনি আমাদের রেমিটেন্স যোদ্ধারা। সবুজ পলো শার্ট পরা একদল বাঙালি দর্শক নেমে পড়ে গ্যালারি পরিষ্কার করতে। এ দলকে দেখে নাকি অন্যরাও নামে গ্যালারি পরিষ্কার করতে! এরকম বেশ কিছু ছবি ইতিমধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। এদের পরিচয় খুজতে গিয়ে দেখা গেলো ছেলেগুলোর বাড়ি চট্টগ্রামের হাটহাজারী এবং ফটিকছড়ির। এ দলের অন্যতম এক উদ্যোক্তা জমির উদ্দিনের সঙ্গে এ লেখকের কথা হয়। তিনি বেশ কিছু চমৎকার তথ্য দিলেন। তাঁদের দলের নাম ‘Chittagong Tigers’। ২০০৭ সালে এ দল গঠন করে সংযুক্ত আরব আমিরাতে থাকা প্রবাসী কিছু তরুন রেমিটেন্স যোদ্ধা। ওরা নিয়মিত খেলাধুলা করে। বিশেষ করে বৃহস্পতবার তারা একত্রিত হয়। শুক্রবার নিজেরা ভাগ হয়ে ম্যাচ খেলে। তাঁদের দলটা সেখানে বেশ পরিচিতি পেয়েছে ইতিমধ্যে। এশিয়া কাপের মতো তারাও নাকি এশিয়ার ক্রিকেট খেলোড়ে দেশ সমূহের প্রবাসীদের সাথে নিয়মিত ম্যাচ খেলে। বিশেষ করে ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা এবং আফগানিস্তানের প্রবাসীদের সাথে। ইতিমধ্যে প্রবাসী বাঙালিদের প্রায় ৫০০ জনের মতো তাঁদের দলের হয়ে খেলে গিয়েছেন। তিনি আনন্দের সাথে জানালেন যে, প্রায় ৮০ শতাংশ ম্যাচ বাঙ্গালীরা জেতে।

জিজ্ঞেস করা হয় কেন এরকম খেলাধুলার আয়োজন করা হয়? তিনি জানালেন বাংলাদেশের ভাবমূর্তি সেদেশে ভালো না। তাঁদের উদ্দ্যেশ্য দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করা। যাতে ছেলেরা খেলার মধ্যে থেকে খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকতে পারে। দুবাই সিটি বিশ্বের অন্যতম উন্নত শহর। সেখানে গেলে অনেক তরুন নিজের চরিত্র ঠিক রাখতে পারেনা। খেলাধুলার মাধ্যমে নিজেরা একত্রিত হয় বলে তাঁদের ঐক্যটা বেশ মজবুত থাকে। তাছাড়া সবাইকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেও নাকি উদ্বুদ্ধ করা হয়, যাতে নিজেদের চরিত্র ঠিক রাখতে পারে।

জিজ্ঞেস করা হয় গ্যালারি পরিষ্কার করার ব্যাপারটা কিভাবে মাথায় আসে? তিনি জানালেন একটা গণসচেতনতা তৈরি করতে তাঁদের এ প্রয়াস। চট্টগ্রামে কদিন আগে জাম্বুরি পার্ক উদ্বোধন হলে একদিনের ব্যবধানে তা অপরিষ্কার করে ফেলে মানুষ! এটা মাথায় রেখে তাঁদের এ পরিকল্পনা ছিল। মাঠে গিয়ে কোন উসৃংখল আচরন না করতে এবং টাইগারদের সম্মান দিতে তাঁরা সেখানে অবস্থানরত বাংলাদেশী কমিউনিটিতে বিশেষ প্রচার প্রচারণা চালান। তিনি আরো জানালেন উন্নত দেশ সমূহ এমনি এমনি উন্নত হয়নি। তাঁদের মধ্যে দেশ প্রেম রয়েছে বলে তাঁরা বেশ উন্নত হয়েছে। তাঁদের অন্যতম উদ্দেশ্যই নাকি গণসচেতনতা তৈরি করা। যাতে মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থানরত লাখ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশী সম্মানের সাথে সেখানে অবস্থান করতে পারেন। তাঁদের সে সংগঠনের বর্তমান সদস্য সংখ্যা ১৫৩ জন।

ধন্যবাদ জমির উদ্দিনদের! আপনারা শুধু রেমিটেন্স যোদ্ধা নন মধ্যপ্রাচ্যে আমাদের নতুন এম্বাসেডর!