৯৭ এর আইসিসি ট্রফির ফাইনালে কেনিয়া বড় টার্গেট দিয়েছিল বাংলাদেশকে। দ্রুত রান তুলতে হবে, উপায় নাই। জাত বোলার বাহাতি মুহাম্মদ রফিককে ওপেনিং-এ নামিয়ে দিল দলপতি আকরাম। চার এবং ছয় মেরে তাঁর প্রতিদানও দিয়েছিল সেদিন। দেশও চ্যাম্পিয়ন হয়। দেশের ক্রিকেটের প্রথম কোন সাফল্য ছিল সেদিন।
দেশে ফিরলে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানতে চেয়েছিল কি চায়? বুড়িগঙ্গার ওপারের ছেলে রফিক গাড়ি-বাড়ি কিছুই চায়নি সেদিন। একটা ব্রিজ বানিয়ে দিতে অনুরোধ করে বলেছিল রফিক- ‘বাবু বাজারে একটা ব্রিজ হলে ভালো হতো। খুব কষ্ট হয় দু’পাড়ের মানুষের আসা-যাওয়া করতে।
অভাবী রফিক স্কুলে পড়তে পারেনি। সে তাড়না থেকেই হয়তো সরকার থেকে পাওয়া জমির উপর আস্তো একটা স্কুল নির্মান করেছিল। নির্মান করেই থামেনি রফিক, নিজের গাড়ি বিক্রি করে সে অর্থ দানও করেছিল স্কুলে!
পরের বছর ৯৮ তে ভারতের হায়দ্রাবাদে সেই কেনিয়ার বিরুদ্ধে আবার মুখোমুখি তৎকালীন দুই চির প্রতিদ্ধন্ধি। প্রথমে ব্যাট করে কেনিয়া বড় সংগ্রহ করে। সেসময় একটা অলিখিত নিয়ম ছিল প্রতিপক্ষ বড় টার্গেট দিলে বাহাতি রফিককে ওপেনিং-এ নামিয়ে দেয়া। সেদিনও ব্যাতিক্রম করেনি অধিনায়ক। নামলো এবং জয় করলো! ৭৭ রানের সঙ্গে বল হাতে ৩ উইকেট। দেশকে জয় এনে দিয়ে সেদিন ম্যাচের সেরাও হয়েছিল রফিক।
আরো পড়ুন:
- মিরপুর শেরেবাংলার শহীদ জুয়েল স্ট্যান্ড থেকে
- ক্রিকেটে ‘মানকাডিং’ আউট সহ কিছু নিয়মে আসছে পরিবর্তন
- বক্সিং ডে’র ইতিহাস
- শুভ জন্মদিন চিত্রা পাড়ের কৌশিক!
- কাতার বিশ্বকাপের সময়সূচী। আপনার প্রিয়দলের খেলা নোট করুন
নিউজিল্যান্ডের বাংলাদেশ সফর ছিল। কিইউই লিজেন্ড ডেনিয়্যেল ভিট্টরি হঠাৎ হাজির বাম হাতি যাদুকর রফিকের কাছে। বোলিং টিপস নিতে এসেছে জেনে বেশ লজ্জায় পড়ে গিয়েছিল সেদিন!
পাকিস্তানের মাটিতে স্বাগতিকদের নাকানি-চুবানি দিয়ে প্রথমবারের মতো বিদেশের মাটিতে টেস্ট জয় হবে। জয়ের খুব কাছে। মুলতানের সুলতান খ্যাত ইনজামাম একপ্রান্তে মাটি কামড়ে ছিল। যদিও তাঁর ওভাবে টিকে থাকা ম্যাচের আম্পায়ারেরও কৃতিত্ব ছিল। আর দুটা উইকেট পড়লেই ইতিহাস। বা হাতের স্পিনার রফিক বোলিং প্রান্তে। দেশের মানুষ অপেক্ষায় এই বুঝি আউট হবে। চিৎকার হবে, মিছিল হবে, রং খেলা হবে। দু এক পা এগিয়ে হালকা দৌড় দিয়ে আম্পায়ারকে অতিক্রম করছে ছেলেটা। বাকী ১০ ফিল্ডার দুরুদুরু বুকে অপেক্ষায় ছেলেটা ‘হাউ’জ দ্যাট’ বলে চিৎকার করবে আর তারাও সুর মিলাবে। আম্পায়ার তর্জনি তুলবে! শেষ দুজনকে আউট করে ১১ ছেলে স্ট্যাম্প আর জাতীয় পতাকা নিয়ে মার্চ করবে পুরো স্টেডিয়াম।
রফিক ঘুর্ণি বল দিতে লাফও দিয়েছে কিন্তু বল ফেলল না! পুরা স্টেডিয়াম স্তব্ধ! নন স্ট্রাইকিং ব্যাটসম্যান ওমর গুল তার জায়গা থেকে বের হয়ে গিয়েছিল। ছেলেটার দায়িত্ব ছিল আলতো করে স্ট্যাম্পের বেলটা ফেলে দিয়ে ভোঁদৌড় দেয়া! তার সাথে বাকিরা, তাঁদের সাথে পুরো দেশ! জ্যান্টলম্যান তা না করে ব্যাটসম্যানকে ডেকে তার জায়গায় দাঁড়াতে বললেন। ওমর গুল এবং তাঁর দেশ হয়তো রফিকের মহানুভবতায় লজ্জা পেয়েছিল সেদিন। কী বিসর্জন কী বিসর্জন! অথচ বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংসে অলক কাপালির ব্যাটে লেগে মাটি ছুয়ে পাক উইকেট রক্ষক রশিদ লতিফের হাতে গেলে উচ্চস্বরে আপিল করলে কাপালিকে আউট দিয়ে দিয়েছিল আম্পায়ার! একই ম্যাচে সততা অসততার দুইরূপ! সেদিন জিততে জিততেও আর জেতা হলোনা বাংলাদেশের। তবে রফিক জয় করেছিল বিশ্ব ক্রিকেটের মন! সুজন, বাশাররা সেদিন দুচোখ মুচতে মুচতে মাট থেকে বের হলেও ভদ্রতার এক অনন্য নজীর রেখে এসেছিল মাঠে।
মুহাম্মদ রফিকের আশা ছিল টেস্ট আর ওডিআই উভয় ফরমেটে ১০০ উইকেট এবং ১০০০ রান করবে। করেছেও তাই।
৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭০ এ জন্ম নেয়া মোহাম্মদ রফিক! শুভ জন্মদিন লিজেন্ড!