১১ ইনজুরি আর ৭ বার পায়ের অপারেশন মাত্র! মাত্র শব্দটি আমার আর আপনার জন্য না। একান্ত মাশরাফির জন্য। আশ্চর্য হবার কিছু নাই। চিকিৎসক পরামর্শ দেয় আর না খেলার। মাশরাফি মানেনি চিকিৎসকের অনুরোধ! পা হারানোর ভয় নাই পাগলাটার। উল্টো যুক্তি দাড় করে মাশরাফি। পায়ে গুলি খেয়ে যে মুক্তিযুদ্ধা দেশের জন্য লড়ে গেছেন সেখানে নিজের পায়ে এ এমন কি! অস্ট্রেলিয়ান শল্যবিদের কাছে মাশরাফি ‘মেডিক্যাল সাইন্সের বিশ্বয়’ একজন। পাগলাটার দেশের জন্য কি কমিটমেন্ট! সেজন্য বুঝি কেউ কেউ তাঁকে যুগের মুক্তিযুদ্ধা বলে সম্মান জানাতে চাইলে বিনয়ের সাথে তা প্রত্যাখ্যান করে বলে, ওরা সবকিছুর ঊর্ধ্বে। বীর-মুক্তিযুদ্ধাদের সঙ্গে কারো তুলনা চলেনা। অথচ জানেন প্রায় একই সময়ে ক্যারিয়ার শুরু করা নিউজিল্যান্ডের শেন বন্ড, আর ব্রিটিশ এন্ড্রো ফ্লিনটপ মাত্র ১-২ বার অপারেশনের পর নিজেদের ক্যারিয়ারের ইতি টানে!
এই মার্চে লন্ডনে প্রবাসী বাঙালিদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গঠিত সংগঠন ‘প্রজেক্ট লন্ডন-১৯৭১’ এর ‘কুইজ একাত্তর’ অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে যোগদান করে মুক্তিযুদ্ধ চর্চায় তরুণদের নানা পরামর্শ দেয় মাশরাফি। শহীদ বুদ্ধিজীবী আবদুল আলীমের কন্যা ডা. নুজহাত চৌধুরীর বক্তব্যে ৭১ এর লড়াকু এবং মারকুটে ব্যাটসম্যান দুর্ধর্ষ ক্র্যাক প্লাটুন শহীদ জুয়েলের ইতিহাস বর্ণনা করতে গেলে মাশরাফি নিজের চোখের জল ধরে রাখতে পারেনি। এরপর মাশরাফির বক্ত্যব্যের পালা আসলে উপস্থিত ভক্তদের হাতের সবগুলো মোবাইল তখন ব্যস্ত ভিডিও ধারণে। এ দৃশ্যে হতাশ হয়ে মাশরাফি বলে, ‘গোটা বাংলাদেশ এখন মোবাইলে ঢুকে গেছে। আজ আমরা যে আয়োজনে এসেছি, সে আয়োজনে যারা বক্তব্য রাখলেন তাদের বক্তব্য আপনাদের মনে কোনো আবেগ সৃষ্টি করতে পেরেছে বলে মনে হয় না। সবাই এখন মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত। এখন যদি মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে প্রশ্ন করি, আপনারা মোবাইল বের করে উত্তর খুঁজবেন। এটা তো হওয়ার কথা ছিল না। এটা বড় দুঃখজনক। আজকে যাদের কারণে আমরা বাংলাদেশ পেয়েছি, তাদের সবসময় আলাদা করে সম্মান করা উচিৎ। তারা সব আলোচনার উর্ধ্বে।’ এবার নিশ্চয়ই পরিষ্কার হয়েছে, ম্যাশের এতো প্রাণশক্তির উৎস কোথায়?
এশিয়া কাপের সে দৃশ্যটার কথা সবারইতো মনে আছে। লিটন অর্ধশত রান করলে মাশরাফি ইঙ্গিত দিয়ে ইনিংসকে বড় করতে ইশারা করেছে। এরপর ডান হাত মুষ্টিবদ্ধ করে বুকের বা দিকের অংশে কয়েকবার আঘাত করে লিটনকে কিছু একটা ইঙ্গিত দিল। হ্যাঁ, ম্যাশ লিটনকে দেশের জন্য লড়তে বলেছে। লিটনও বড়ভাইয়ের কথা রেখেছিল প্রাণপণে। শিরোপা জেতেনি তাঁতে কি! ম্যাশের কাছে ওই দৃশ্যটায় শিরোপা, যেদিন একহাতে তামিম ব্যাট করতে নেমে পড়েছিল বড়ভাইয়ের অনুরোধে। ও হ্যাঁ! ম্যাশের গোয়ার্তুমির কথা বলা হয়নি। এশিয়া কাপে মুহাম্মদ মিথুনকে দলে দেখে অনেকের গা জ্বলুনি ধরেছিল! কেন স্যার মিথুন আবার? এশিয়া কাপের গুরুত্বপূর্ণ দুই জয়ে এই মিথুনের বড় অবদান ছিল। ম্যাশের গোয়ার্তুমিতেই মিথুন দলে এসেছিল! এক মিনিটে স্রোতের বিপরীতে চিত্রা পাড় হওয়া কৌশিকের বর্ণনা এতো কমে শেষ করা সম্ভব না!
আরো পড়ুনঃ মাশরাফি একজন যোদ্ধা
ক্যাপ্টেন মাশরাফির ভোরের যুদ্ধটার কথা জানিতো? ঘুম থেকে উঠে দু’পা নাড়াতে পারেনা। অন্তত ১৫ মিনিট নিজের পায়ের সাথে যুদ্ধ করতে হয়! দল যখন ড্রেসিংরুমে জয়ের আনন্দ করে ম্যাশ তখন ইনজেকশন নিয়ে নিজ হাঁটুর জমে থাকা পানি বের করে!
থেমে থাকেনি মাশরাফি। ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’ ফাউন্ডেশন করে তরুন-কিশোর প্রতিভাবানদের নিয়ে কাজ করছে মাশরাফি। ক্রিকেট, ফুটবল এবং ভলিবল নিয়ে আপাতত তাঁর একাডেমী চলছে। নিজ এলাকায় পিছিয়ে পড়া বন্ধুদেরও ম্যাশ ভুলে যায়নি। সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে প্রিয় শৈশব বন্ধুদের।
ক্রিকেট ভদ্রলোকের খেলা ছিল, এখন নাই বললেও চলে। মাঠে নিয়মিত স্লেজিং চলে এখন। খেলা শেষে উভয় দল করমর্দন করে নেয় সৌহার্দ্য বজায় রাখতে। মাশরাফি কি করে জানেন? হ্যান্ডশেক করার সময় বামহাত থাকে ক্যাপের সামনের অংশে! ব্যাপারটা অনেকে গুরুত্ব না দিলেও দক্ষিন আফ্রিকার লিজেন্ড এবি ডি ভিলিয়ার্সের চোখ এড়ায়নি তা। ম্যাশকে ক বছর আগের জন্মদিনে উইশ করেছে এমন কয়েকটা ছবি পোস্ট করে।
৫ অক্টোবর, ১৯৮৩-এ নড়াইল জেলায় জন্ম নেয়া নড়াইল এক্সপ্রেস, ক্যাপ্টেন বাংলাদেশ, অধিনায়কদের নায়ক, একজন ট্রু লিডার মাশরাফি বিন মোর্তজা (কৌশিক)কে জন্মদিনে অনেক অনেক শুভেচ্ছা!