কদিন আগে দেশের শীর্ষস্থানীয় মোবাইল সেবাদাতা গ্রামীনফোন ই-সিম আনার ঘোষণা দিয়েছে। এরপর থেকে এটা নিয়ে চলছে বিভিন্ন আলোচনা। ই-সিম কী এবং কেন? সাধারণ সিমের চেয়ে এর পার্থক্য কোথায় ইত্যাদি। ই-সিম আমাদের দেশে নতুন হলেও বিশ্বের অনেক দেশে ই-সিমের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আমাদের পার্শবর্তী দেশ ভারত, ভুটান, মায়ানমার ও পাকিস্তানে ই-সিমের ব্যবহার আছে।
ই-সিম কী:
ই-সিমের (ESIM) এর পুরো নাম Embedded Subscriber Identity Module। এটা সাধারণ প্লাস্টিকের সিমের মতো না। সুতরাং এটা খুলে অন্য সিম লাগানোর মতোও না। ই-সিম সংযুক্ত থাকে মোবাইল ফোনের মাদারবোর্ডের সাথে।
সাধারণ প্লাস্টিকের সিমের সাথে সোনালী রঙের যে ধাতু রয়েছে তার নাম চিপ। মূলত মোবাইল ফোন অপারেটরের তথ্য সংরক্ষণ থাকে এ চিপে। সাধারণ সিমের মধ্যে আবার কয়েক সাইজের সিম দেখা যায়। সাধারণ বা প্রচলিত সিমের সাথে ই-সিমের আকারেও বড় পার্থক্য আছে। প্রচলিত সিমের যে তিনটি আকার আছে তারমধ্যে মিনি সিমের আকার হয় দৈর্ঘ্যে ২৫ মিলিমিটার আর প্রস্থে ১৫ মিলিমিটার। মাইক্রো সিমের আকার হয় দৈর্ঘ্যে ১৫ মিমি ও প্রস্থে ১২ মিমি। ন্যানো সিমের আকার দৈর্ঘ্যে ১২.৩ মিমি প্রস্থে ৮.৮ মিমি। ই-সিমের আকার অনেক কম। দৈর্ঘ্যে মাত্র ৬ মিমি ও প্রস্থে ৫ মিমি।
ই-সিমের একটা চিপ আগে থেকেই আপনার ফোনে এমবেড করা থাকবে। ফোন কেনার পর শুধুমাত্র অপারেটরের দেয়া একটা কিউআর (QR) কোড স্ক্যান করলেই চালু হয়ে যাবে ই-সিম। ই-সিম প্রচলিত সিমের মতো কাজ করলেও এর বেশ কিছু সুবিধা আছে। যেমন এটাকে বলা হচ্ছে পরিবেশ বান্ধব সিম। এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে ব্যবহারকারী চাইলেই খুব সহজেই এক অপারেটরের নেটওয়ার্ক থেকে অন্য অপারেটর নেটওয়ার্কে সুইচ করতে পারবে।
প্রশ্ন আসে, কোন কোন মোবাইলে ই-সিম সাপোর্ট করে?
আই ফোন এক্স আর-এর পর থেকে তাদের সব ভার্সনে ই-সিম সাপোর্ট করবে। স্যামসাং গ্যালাক্সি এস-২০ সিরিজ, নোট-২০ সিরিজ, ফোল্ড জেড ফোল্ড, জেড ফ্লিপ রিরিজগুলোতে সাপোর্ট করবে। গুগল পিক্সেল-২ এর পর থেকে সব ভার্শনে ই-সিম সাপোর্ট করবে।
এক জরিপে দেখা গেছে ২০২৫ সালের মধ্যে বিশ্বের ৬০ শতাংশ মানুষ ই-সিমে প্রবেশ করবে। এবং ই-সিমের ব্যবহার খুব দ্রুত বাড়ছে। বাংলাদেশ কেন পিছিয়ে থাকবে!
ধরুন আপনি এমন এক জায়গায় গেছেন যেখানে আপনার ব্যবহার করা অপারেটরের নেটওয়ার্ক কাজ করছেনা। সেক্ষেত্রে আপনি সাময়িক অন্য অপারেটরে সুইচ করতে পারবেন। সে প্রক্রিয়া নিশ্চয়ই সংশ্লিষ্ট অপারেটর আপনাকে জানিয়ে দেবে।
দেশের বাইরে গেলেও সেখানে স্থানীয় অপারেটরের সিম কেনার ঝামেলা আপনাকে পোহাতে হবেনা। সেখানেও শুধুমাত্র স্ক্যান করার মাধ্যমে স্থানীয় অপারেটরে অনায়াসে সুইচ করতে পারবেন। বলা হচ্ছে একটা ই-সিম ৫ টা ভার্চ্যুয়াল সিমের তথ্য ধারণ করতে পারে।
ফোন চুরি হওয়ার ঘটনা অহরহ আছে আমাদের দেশে। তবে ই-সিমে চাইলেও ব্যবহারকারী সব তথ্য মোচতে পারবেনা। এটা অবশ্যই বড় সুবিধা।
এর বড় অসুবিধা হলো, ফোন নষ্ট হয়ে গেলে সিমে সংরক্ষিত থাকা ফোন নাম্বার হারিয়ে যাবে। যদিও এখন সিমে খুব কম লোকই কন্টাক্ট নাম্বার সংরক্ষণ করে। যা এখন ফোনে লগইন করা ইমেইলে সহজে সংরক্ষণ হচ্ছে ক্লাউডে। সুতরাং এতে ভয়ের কিছু নেই।
আরেকটা অসুবিধা হলো, আপনি যদি মনে করেন আপনাকে কেউ ট্র্যাক করছে আপনার সাথে থাকা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে। প্রচলিত সিমে মোবাইল থেকে সিম খুলে ফেললে আপনাকে ট্র্যাক করা সম্ভব হবেনা। ই-সিম ব্যবহারে এটা সম্ভব হবেনা। এতে আপনার নিরাপত্তার কিছুটা হলেও হুমকি থেকে যায়।