কোরআন পড়ুন

খুঁজুন

সমুদ্রে লঘুচাপ ও নিম্নচাপ: সহজ ভাষায় ব্যাখ্যা

লঘুচাপ ও নিম্নচাপ উভয়ই আবহাওয়ার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, তবে তাদের তীব্রতা ও প্রভাবের দিক থেকে তারা ভিন্ন। নিম্নচাপ লঘুচাপের একটি বিশেষ এবং অধিক তীব্র রূপ, যা সমুদ্রের ওপর তৈরি হয়ে স্থলভাগে প্রবেশ করে ভয়ানক প্রভাব ফেলতে পারে।

লঘুচাপ কী?

লঘুচাপ (Low Pressure) হলো একটি আবহাওয়াগত অবস্থা যেখানে বায়ুমণ্ডলের চাপ কম থাকে। সাধারণত, এই অবস্থায় বায়ু উষ্ণ হয় এবং উপরের দিকে উঠে যায়। ফলে নিম্নচাপের কেন্দ্রে বায়ুর চাপ কমে যায়। এটি মেঘমালার সৃষ্টি করে এবং বৃষ্টিপাত, ঝড়ঝাপ্টার মতো আবহাওয়া ঘটনার কারণ হতে পারে।

লঘুচাপ কীভাবে সৃষ্টি হয়?

লঘুচাপ সৃষ্টি হয় মূলত বায়ুর উষ্ণায়ন ও ঘনত্বের পরিবর্তনের মাধ্যমে। নিম্নে লঘুচাপ সৃষ্টির প্রক্রিয়া ধাপে ধাপে ব্যাখ্যা করা হলো:

  1. উষ্ণায়ন:
    • সূর্যের তাপের কারণে স্থলভাগ ও সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। উষ্ণ স্থলভাগ বা সমুদ্রপৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ুমণ্ডলের বায়ু গরম হয়ে যায়।
  2. উষ্ণ বায়ুর উপরে উঠা:
    • উষ্ণ বায়ু হালকা হয় এবং উর্ধ্বমুখী হয়ে উঠে যায়। এটি একটি ভরকেন্দ্র থেকে বায়ুকে উপরে উঠতে বাধ্য করে।
  3. নিম্নচাপ অঞ্চলের সৃষ্টি:
    • উষ্ণ বায়ু উপরে উঠার ফলে ভূপৃষ্ঠে একটি খালি জায়গা বা নিম্নচাপ অঞ্চল সৃষ্টি হয়। এখানে বায়ুর চাপ আশেপাশের অঞ্চলের তুলনায় কম থাকে।
  4. বায়ুর পরিবর্তন:
    • নিম্নচাপ অঞ্চল সৃষ্টির ফলে আশেপাশের উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে বায়ু এই নিম্নচাপ অঞ্চলে ধাবিত হয়। এই ধাপটি ক্রমাগত চলতে থাকে এবং একটি নির্দিষ্ট নিম্নচাপ অঞ্চলের সৃষ্টি হয়।

আরো পড়ুন


লঘুচাপ কেন হয়?

লঘুচাপ হওয়ার প্রধান কারণ হলো বায়ুর উষ্ণায়ন এবং তার ঘনত্বের পরিবর্তন। নিম্নে এর কিছু মূল কারণ ব্যাখ্যা করা হলো:

  1. সূর্যের তাপ:
    • সূর্যের তাপমাত্রা স্থলভাগ ও সমুদ্রপৃষ্ঠকে গরম করে। গরম পৃষ্ঠ থেকে বায়ু উত্তপ্ত হয়ে উপরে উঠে যায়। এটি লঘুচাপ সৃষ্টির মূল কারণ।
  2. আদ্রতা ও বাষ্পীভবন:
    • সমুদ্রপৃষ্ঠের উপর আদ্রতা ও বাষ্পীভবন প্রক্রিয়ায় উষ্ণ বায়ু তৈরি হয়। উষ্ণ ও আদ্র বায়ু হালকা হয় এবং উপরে উঠে যায়, ফলে নিচে লঘুচাপের সৃষ্টি হয়।
  3. স্থলভাগের বৈশিষ্ট্য:
    • নির্দিষ্ট অঞ্চলের স্থলভাগের বৈশিষ্ট্য যেমন মরুভূমি বা তৃণভূমি, এই অঞ্চলগুলোতে দ্রুত তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়, যা লঘুচাপ সৃষ্টির সহায়ক।
  4. ভূপৃষ্ঠের বৈচিত্র্য:
    • সমুদ্র, পাহাড়, বন ইত্যাদি ভূপৃষ্ঠের বৈচিত্র্য আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণ হতে পারে। সমুদ্রের তাপমাত্রা স্থলভাগের তুলনায় ধীরে পরিবর্তিত হয়, ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উপরে লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে।
  5. আবহাওয়ার মৌসুমি পরিবর্তন:
    • মৌসুমি পরিবর্তন যেমন গ্রীষ্মকাল বা বর্ষাকালে লঘুচাপের সৃষ্টি বেশি দেখা যায়। গ্রীষ্মকালে সূর্যের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়, যা লঘুচাপ সৃষ্টি করে।

নিম্নচাপ কী?

নিম্নচাপ (Depression) হলো একটি বিশেষ ধরনের লঘুচাপ যা আরও স্পষ্ট এবং সুনির্দিষ্ট। নিম্নচাপ অঞ্চলে বায়ুর চাপ সাধারণত সমুদ্রপৃষ্ঠের স্বাভাবিক চাপের থেকে বেশ কম থাকে এবং এটি প্রায়শই একটি ঘূর্ণিঝড়ের প্রাথমিক ধাপ হিসেবে কাজ করে। নিম্নচাপের ফলে বৃষ্টি, ঝড়ো হাওয়া এবং সমুদ্রে ঢেউয়ের উচ্চতা বেড়ে যেতে পারে।

নিম্নচাপ কীভাবে সৃষ্টি হয়?

নিম্নচাপ (Depression) সাধারণত সমুদ্রের উপর সৃষ্টি হয় এবং এটি লঘুচাপের একটি শক্তিশালী রূপ। নিম্নে নিম্নচাপ সৃষ্টির প্রক্রিয়া ধাপে ধাপে ব্যাখ্যা করা হলো:

  1. উষ্ণ সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা:
    • সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা ২৬.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি হলে, সমুদ্রের পানি দ্রুত বাষ্পীভূত হয় এবং বায়ুতে আদ্রতা বৃদ্ধি পায়।
  2. উষ্ণ ও আদ্র বায়ুর উপরে উঠা:
    • উষ্ণ ও আদ্র বায়ু হালকা হয়ে উপরের দিকে উঠে যায়। এই উষ্ণ বায়ু উপরে উঠে গিয়ে ঠান্ডা হয় এবং ঘনীভূত হয়ে মেঘমালার সৃষ্টি করে।
  3. নিম্নচাপ অঞ্চলের সৃষ্টি:
    • উষ্ণ বায়ুর উপরে উঠার ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠে একটি নিম্নচাপ অঞ্চল সৃষ্টি হয়। এই নিম্নচাপ অঞ্চলে বায়ুর চাপ আশেপাশের অঞ্চলের তুলনায় কম থাকে।
  4. বায়ুর ঘূর্ণন ও সংগঠন:
    • নিম্নচাপ অঞ্চলের কেন্দ্রে বায়ু উপরে উঠার ফলে, আশেপাশের উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে বায়ু নিম্নচাপের দিকে ধাবিত হয়। পৃথিবীর ঘূর্ণনজনিত করিওলিস শক্তির কারণে, এই বায়ু একটি ঘূর্ণনের আকার নেয়।
  5. সংগঠিত নিম্নচাপের গভীরতা বৃদ্ধি:
    • নিম্নচাপ কেন্দ্রের বায়ুর চাপ আরও কমতে থাকে এবং ঘূর্ণনের গতি আরও বাড়ে। এর ফলে নিম্নচাপ আরও শক্তিশালী হয়ে উঠে।

নিম্নচাপ কেন হয়?

নিম্নচাপ হওয়ার প্রধান কারণগুলো হলো:

  1. উষ্ণ সমুদ্রপৃষ্ঠ:
    • উষ্ণ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে বায়ুতে আদ্রতা বৃদ্ধি পায়, যা নিম্নচাপের প্রধান কারণ। উষ্ণ পানি দ্রুত বাষ্পীভূত হয় এবং বায়ুকে উষ্ণ ও আদ্র করে তোলে।
  2. বায়ুর উর্ধ্বগমন:
    • উষ্ণ বায়ু হালকা হয়ে উপরের দিকে উঠে যায়। এই প্রক্রিয়াটি নিম্নচাপ সৃষ্টির মূল উপাদান।
  3. বায়ুর ঘূর্ণন:
    • পৃথিবীর ঘূর্ণনজনিত করিওলিস শক্তির কারণে নিম্নচাপ অঞ্চলে বায়ুর ঘূর্ণন সৃষ্টি হয়। এই ঘূর্ণন নিম্নচাপকে আরও সংগঠিত ও শক্তিশালী করে তোলে।
  4. আদ্রতা ও বাষ্পীভবন:
    • সমুদ্রপৃষ্ঠের উপর উচ্চ আদ্রতা ও বাষ্পীভবন প্রক্রিয়া নিম্নচাপের সৃষ্টি করে। উষ্ণ ও আদ্র বায়ু মেঘমালার সৃষ্টি করে এবং ঘূর্ণন প্রক্রিয়ায় নিম্নচাপকে তীব্র করে তোলে।
  5. স্থলভাগ ও সমুদ্রের তাপমাত্রার পার্থক্য:
    • স্থলভাগ ও সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রার পার্থক্যও নিম্নচাপের সৃষ্টি ও বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। স্থলভাগের তুলনায় সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা ধীরে পরিবর্তিত হয়, ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠে নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়।

নিম্নচাপ থেকে ঘূর্ণিঝড়:

নিম্নচাপ থেকে ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরের প্রক্রিয়া একটি জটিল প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া, যা বেশ কয়েকটি শর্ত পূরণের উপর নির্ভর করে। নিম্নে এই প্রক্রিয়া ও শর্তাবলী সংক্ষেপে বর্ণনা করা হলো:

  1. উষ্ণ সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা:
    • সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা সাধারণত ২৬.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি হতে হবে। এই তাপমাত্রা বায়ুকে গরম করে, যা উপরে উঠতে থাকে।
  2. বায়ুর ঘূর্ণন ও সংগঠিত হওয়া:
    • উষ্ণ বায়ু উপরে উঠলে নিম্নচাপ অঞ্চলে একটি ঘূর্ণনের সৃষ্টি হয়। এই ঘূর্ণন প্রক্রিয়াটি যথেষ্ট শক্তিশালী হতে হবে এবং নির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা (ক্লকওয়াইজ বা অ্যান্টি-ক্লকওয়াইজ) অনুযায়ী আবর্তিত হতে হবে।
  3. নিম্নচাপের গভীরতা ও বায়ুর চাপ:
    • নিম্নচাপের গভীরতা যত বাড়বে, বায়ুর চাপ তত কমবে এবং ঘূর্ণনের গতি তত বাড়বে। যখন বায়ুর চাপ নির্দিষ্ট একটি মাত্রায় নেমে আসে এবং ঘূর্ণনের গতি বেড়ে যায়, তখন এটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরিত হতে পারে।
  4. উপরিস্তরে বায়ু প্রবাহ (Upper Level Wind Flow):
    • উপরিস্তরে বায়ু প্রবাহ হতে হবে কম। যদি উপরিস্তরে বায়ু প্রবাহ খুব শক্তিশালী হয়, তাহলে এটি নিম্নচাপের ঘূর্ণন প্রক্রিয়াকে ভেঙে দিতে পারে।
  5. নির্দিষ্ট সময় ধরে ঘূর্ণন:
    • নিম্নচাপকে একটি নির্দিষ্ট সময় ধরে সমুদ্রের উপর ঘূর্ণন করতে হবে, যাতে এটি যথেষ্ট শক্তি সংগ্রহ করতে পারে। সময়ের সাথে সাথে এবং প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণের মাধ্যমে, এটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরিত হয়।

সংক্ষেপে রূপান্তর প্রক্রিয়া

  1. উষ্ণ সমুদ্রপৃষ্ঠ → উষ্ণ বায়ু উপরে ওঠে।
  2. নিম্নচাপের সৃষ্টি → ঘূর্ণন প্রক্রিয়ার শুরু।
  3. গভীর নিম্নচাপ → বায়ুর চাপ কমে, ঘূর্ণনের গতি বাড়ে।
  4. শক্তিশালী ঘূর্ণন → ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি।

এভাবে, নিম্নচাপ থেকে ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরিত হওয়ার জন্য উষ্ণ সমুদ্রপৃষ্ঠ, যথেষ্ট গভীর নিম্নচাপ, উপযুক্ত বায়ুর ঘূর্ণন, এবং কম উপরিস্তর বায়ু প্রবাহ প্রয়োজন। শর্তাবলী পূরণ হলেই এটি একটি প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে।