আমাদের সমাজে সম্মান এবং মর্যাদাপূর্ণ একটা পদবি ‘চৌধুরী’। চৌধুরী বংশীয় হবার কারণে অনেককে নামের পরিবর্তে চৌধুরী সাহেব সম্বোধন করতে দেখা যায়। চৌধুরী বংশীয় হয়েও অনেকে জানেন না আসলে এ পদবির উৎপত্তি। চলুন জেনে নেই বিস্তারিত।
হিন্দি চৌধুরি অর্থ (বিশেষ্যে.) নৌ হস্তী অশ্ব ও পদাতিরূপ চার শক্তির অধিকারী সামন্ত রাজা; গ্রামের মোড়ল, নগরের প্রধান ব্যবসায়ী, পদবিশেষ।
উপমহাদেশে দীর্ঘকাল থেকে রাজা-সম্রাটদের নিয়োজিত নৌ হস্তী অশ্ব ও পদাতিরূপ চার শক্তির অধিকারী সামন্ত রাজাকে চৌধুরি পদবিতে ভূষিত করা হতো। মুসলিম আমলেও পদবিটি কিছুটা একই ধরন নিয়ে কিছুকাল অক্ষুণ্ন থেকে যায়। তবে তার সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি করা হতে থাকে। সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় চৌধুরি পদের অধিক্ষেত্র কমে যায়। ফলে তাদের ক্ষমতা এবং জৌলুশ পূর্বের তুলনায় কমে যেতে থাকে।
ইংরেজ আমলে প্রাচীন চৌধুরি পদবির দায়িত্ব ও ক্ষমতা বিলোপ করে ইংরেজদের বশংবদ প্রভাবশালী কিছু ভূস্বামীদের অঞ্চলভেদে চৌধুরি পদবিতে ভূষিত করা হয়। এরপর গ্রামের মোড়ল এবং নগরের অনেক ব্যবসায়ীকেও এই পদবি প্রদান করা হয়। ফলে চৌধুরি পদবি তার সৃষ্টিকালীন বিশাল মর্যাদা হারিয়ে অনেকটা সাধারণ মর্যাদার হয়ে যায়। এই চৌধুরিদের কাজ ছিল ইংরেজ প্রশাসকদের সন্তুষ্ট রাখা। বিনিময়ে কিছু সরকারি সুবিধা তার ভোগ করতে পারত।
চৌধুরির সঙ্গে স্থানবিশেষে মজুমদার, রায় প্রভৃতি পদবির উপস্থিতিও ছিল।এমন পদবিধারীদের জমিদার ও প্রশাসনে কিছুটা খাতির ছিল। চৌধুরি পদবি পেয়ে তারা খুশি হতো এবং সরকারের প্রতি আরও অনুগত হয়ে নির্দ্বিধচিত্তে আদেশ পালন করে যেত। উপাধিটি দেওয়া হতো ব্যক্তিকে। কিন্তু তা ব্যক্তি হতে উত্তরপুরুষ হয়ে প্রজন্মান্তরিত হতে থাকে। ফলে চৌধুরির সংখ্যা হুহু করে বেড়ে যায়।
বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে চৌধুরি পদবিটা খুব জনপ্রিয় ছিল। নোয়াখালীতে মজুমদার এবং কুমিল্লায় রায় (বিশেষত হিন্দুদের) পদবির প্রচুর লোক ছিল। এখনো চট্টগ্রামে চৌধুরি, নোয়াখালীতে মজুমদার এবং কুমিল্লায় প্রচুর রায় পদবির লোক পাওয়া যায়। এজন্য বলা হয়:
নোয়াখালীর মজুমদার কুমিল্লার রায়
চট্টগ্রামের চৌধুরি জলে ভেসে যায়।
—————————————
যাঁরা ধরেন ভুল,
সুভাষিত বন্ধু সুহৃৎ দোষ করে নির্মূল।
সূত্র: ড. মোহাম্মদ আমিন।